নাহিদ ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চৈত্রের খরতাপ যেন আর কাটছেই না। রাজশাহীর প্রকৃতি যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। আগুন ঝরা আবহাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দেখা দিয়েছে।
একটু শীতল পরশের জন্য ব্যকুল হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ের মানুষ। যত দিন গড়াচ্ছে তাপমাত্রা যেন ততই বাড়ছে। দিনে লু হাওয়া, রাতে গোমট গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে সবার।বৃষ্টির জন্য মানুষের মধ্যে যেনো হাহাকার পড়ে গেছে।
সূর্য দহনে শরীরের চামড়া পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তীব্র রোদে পুড়ছে বরন্দ্রের মাটি। আর এমন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকলে আমের গুটি ঝরে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক রাজীব খান বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ থেকে রাজশাহীর তাপমাত্রা বাড়ছেই। আর বৃষ্টিরও দেখা নেই।
বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দিন থেকে থার্মোমিটারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছিল। তবে আজ রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পুরোপুরি ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছে।
শনিবার (৮ এপ্রিল) দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি ওপরে উঠলে বলা হয় মাঝারি। এছাড়া ৪০ ডিগ্রি বা তার ওপরে উঠলেই তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাই রাজশাহীতে এখন মৃদু তাপপ্রবাহ চলছে। বৃষ্টি না হলে এটি মাঝারিতেও রূপ নিতে পারে। তবে তাপপ্রবাহ বাড়লেও বাতাসের আদ্রতা কম আছে। এতে শরীরে ঘামের পরিমাণ কম হচ্ছে। তাই অস্বস্তি কিছুটা কম হচ্ছে। আজ শনিবার বেলা ৩টায় রাজশাহীতে বাতাসের আদ্রতার পরিমাণ ১৭ শতাংশ ছিল বলেও উল্লেখ করেন এই আবহাওয়া পর্যবেক্ষক।
এদিকে, তাপপ্রবাহ অব্যাত থাকলে রাজশাহীতে আমের গুটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময় বৃষ্টি না হলে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে আমের গুটি ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই আম চাষিসহ রাজশাহীর সব মানুষই এখন বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবার রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর। গেলবার আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। তবে এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহীতে এবছর প্রায় সব গাছেই প্রচুর মুকুল এসেছিল। মৌসুমের প্রথম দিকে বৃষ্টি হওয়ায় সেই মুকুল এরই মধ্য আমের গুটিতে পরিণত হয়েছে। এমন খরা অব্যাহত থাকলে আমের কিছু গুটি পড়ে যাওয়ার শঙ্কা করেন সবাই।
তবে তাপপ্রবাহের আগে রাজশাহীতে দুই দফা বৃষ্টি হওয়ায় সেই আশঙ্কা একটু কম। যেটুকু ঝরবে সেটা স্বাভাবিক বলেই ধরে নিতে হবে। তাই তারা কৃষি বিভাগ থেকে আম চাষিদের গাছ ও গুটির পরিচর্যা করে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন।