নাহিদ ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহের পর তৃষ্ণার্ত রাজশাহী আজ ভিজল স্বস্তির বৃষ্টিতে। বৃষ্টির জন্য এমন অপেক্ষায় যেন বহুদিন করেনি রাজশাহীবাসী।বৃষ্টির জন্য চারিদিকে হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। অবশেষে দেখা মিলল কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির।পরিমাণে অল্প হলেও তপ্ত প্রকৃতিতে সজীবতা ফিরেছে। দমকা হাওয়াসহ ১০ মিনিটের এ বৃষ্টি জনমনে বুলিয়ে দিয়েছে প্রশান্তির পরশ।গরমের ভাব ওঠা পিচঢালা রাজপথে নেমেছে শীতলতা।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকালটা শুরু হয় গরম দিয়েই। বিকেল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে দুপুরের পর থেকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে। এরপর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শুরু হয় ধূলিঝড়। পাঁচ মিনিটের এ ধুলিঝড়ে নাস্তানাবুদ হন পথচারীরা। এরপর পুরো প্রকৃতি যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। তবে বিকেল সাড়ে ৫টার পর পশ্চিমকাশে আবারও কালো মেঘ জমে। এরপর ৫টা ৫০মিনিটে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি।রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম জানান, সোমবার বিকেল ৫টা ৫০ থেকে ছয়টা পর্যন্ত রাজশাহীতে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়েছে। এ ১০ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মিলিমটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর এ সময় রাজশাহীতে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮ থেকে ৯ নটিক্যাল মাইল। সাধারণত বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৮ নটিক্যাল মাইল হলে তাকে ঝড় হিসেবে ধরা হয়। তাই রাজশাহীতে আজ ঝড় হয়নি। দমকা হাওয়াসহ বজ্র সৃষ্টি হয়েছে। এখনও (সন্ধ্যা সোয়া ৭টা) গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। রাত ৯টায় মোট বৃষ্টির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে বলেও জানান এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।এর আগে রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে সর্বশেষ বৃষ্টিপাত হয়েছিল গত ৩ এপ্রিল। ওই দিন মাত্র ৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর আর বৃষ্টি হয়নি। ৪ এপ্রিল থেকেই রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে শুরু হয় তাপপ্রবাহ। শনিবার (২২ এপ্রিল) পর্যন্ত সে তাপপ্রবাহ অব্যাহত ছিল। তাই বৃষ্টির জন্য প্রতীক্ষার প্রহর যেন কাটছিলই না রাজশাহীবাসীর।
এরই মধ্যে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে রাজশাহীতে সালাতুল ইস্তিসকার আদায় করা হয়েছে। রমজানের জুমাতুল বিদায় করা হয়েছে বিশেষ মোনাজাত। ঈদের বিশাল জামাতেও ফরিয়াদ জানানো হয়েছিল বৃষ্টির জন্য। শেষ পর্যন্ত সোমবার সে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা মিলে। আর স্মরণকালের মধ্যে একটি দীর্ঘ তাপপ্রবাহ পার করল পদ্মাপাড়ের মানুষ। মৃদু তাপপ্রবাহ দিয়ে শুরু হয়েছিল এ কঠিন জীবনযাত্রা।এরপর মাঝারি ও পরে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়। আর শেষ পর্যন্ত টানা চার দিন অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে ছিল রাজশাহী। ফলে বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবন। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও নিদারুণ কষ্টে হাঁসফাঁস করছিল। তবে আজকের এক পশলা বৃষ্টিতে গরম থেকে কিছুটা হলেও হাঁফ ছেড়ে বাঁচল প্রাণীকূল। এর আগে ১৭ এপ্রিল চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এর আগেও পরে টানা চারদিন ৪২ ডিগ্রির ঘরেই ছিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।