নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মাইক্রো সার্জারির মাধ্যমে ছেঁড়া পর্দা জোড়া দেওয়া ও মধ্যকর্ণের ইনফেকশনসহ কানের সব জটিল রোগের সফল অপারেশন করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছর যাবত সরকারি খরচেই এসব জটিল অপারেশন হচ্ছে।তবে না জানার কারণে অনেকেই বাইরে গিয়ে বেশি টাকা খরচ করে এসব অপারেশন করাচ্ছেন। আবার অনেকে কানের এসব জটিলতাকে অবেহলা করে বিভিন্ন কবিরাজি চিকিৎসা নিচ্ছেন।এতে তারা নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তাই এজন্য সচেতনতাও জরুরি।রামেক হাসপাতালের লাইভ অটোলজি ওয়ার্কশপে রোববার (৭ মে) এই তথ্য জানানো হয়। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথমেই লাইভ অটোলজি ওয়ার্কশপ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। পরে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে লাইভ সার্জারি শুরু হয়। সেখান থেকে সেমিনার কক্ষে এসব জটিল অপারেশনের অত্যাধুনিক চিকিৎসা ও টেকনিক্যাল বিভিন্ন ইস্যু হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকদের দেখানো হয়।
ওয়ার্কশপের প্রথম পর্বে জানানো হয় যে, মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে কানের পর্দা জোড়া লাগানোকে টিমপ্যানোপ্লাস্টি বলা হয়। এর মাধ্যমে মধ্য কর্ণের অন্যান্য সমস্যা; যেমন- ইনফেকশন, কানে কম শোনা ইত্যাদির এক সঙ্গে সমাধান করা হয়ে থাকে। কানের পর্দার বিভিন্ন সমস্যা ভেদে ছয় ধরনের টিমপ্যানোপ্লাস্টি অপারেশন হয়ে থাকে। এ অপারেশনের ফলে কানের শ্রবণশক্তি বাড়ে। বড় কথা হল কান পাকা রোগ সম্পূর্ণরূপে দূর হয়; ফলে কান শুকনা থাকে এবং ঘন ঘন কান পাকার জন্য শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয় না।
আর মধ্যকর্ণ ও এর ম্যাসটরেড হাড়ের ইনফেকশনের জন্য বা পর্দা ফাটা বা ছিদ্র থাকার কারণে কানে কম শোনার জন্য অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কানের কারণে মাথা ঘোরা থেকে মুক্তির জন্যও কানের মাইক্রোসার্জারি করা হয়ে থাকে। অপারেশনের মাধ্যমে কানের ভেতরের ইনফেকশনের মাত্রা নিরূপণ করা যায়। ইনফেকটেড টিস্যুকে সম্পূর্ণরূপে দূর করা এবং ইনফেকশনের কারণে কানে শোনার যাতে আর কোনো অবনতি না হয়, তার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া কানের ইনফেকশন যাতে মস্তিষ্কে না ছড়ায়, তার ব্যবস্থা করা হয়। আর কানের পর্দা ফাটা থাকলে মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে তা জোড়া লাগানো যায়। কানে কম শুনলে এ অবস্থার উন্নতি করার চেষ্টা করা হয়। সাধারণত ইউস্টেশিয়ান টিউবের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যাঘাত ঘটার জন্য বা মধ্য কর্ণের ইনফেকশনের জন্য বা অন্তঃকর্ণের কোনো সমস্যার কারণে মাথা ঘোরালে, তার উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা যায়।
লাইভ অটোলজি ওয়ার্কশপের প্রথম সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান খান বাদশা। সভাপতিত্ব করেন নাক, কান ও গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও রামেকের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুর রহমান।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক গৌতম কুমার পাল, রামেকের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম. হাবিবুল্লাহ সরকার।
আর অতিথি সার্জন হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং লাইভ অপারেশন করেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রধান ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব অটোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড নেক সার্জনের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. দেলোয়ার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রামেক হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুব্রত ঘোষ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিলন কুমার চৌধুরী। আর পুরো ওয়ার্কশপটি আয়োজনে সহযোগিতা করে বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।
ওয়ার্কশপের প্রথম সেশন শেষে রামেক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নাক, কান ও গলা বিভাগের উদ্যোগে লাইভ সার্জারি করা হয়। এটি লাইভের মাধ্যমে সেমিনার কক্ষে প্রচার করা হয়। সেখানে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো নিয়ে নাক, কান-গলা বিভাগের অধ্যাপকবৃন্দ অন্যদের ব্রিফ করেন।