নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে এই নির্বাচন আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। তবে না নিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না, এ কথা ঠিক নয়।কারণ নির্বাচনে আরও প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে।
শুক্রবার (১২ মে) বিকেলে রাজশাহী সার্কিট হাউসে সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।ওই সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘বিএনপি আসছে না ঠিকই কিন্তু আরও সব প্রতিদ্বন্দ্বী তো থাকছেন।তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না বা কেউ নেই, সে কথা ঠিক নয়। তবে বিএনপি এলে নির্বাচন আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো। কিন্তু কেউ যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবেই না- এটা কী বলা যাবে? আছেন তো আরও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। ইলেকশনে দুর্বল কিংবা সবল প্রার্থী বলে কিছু নেই। যিনি দাঁড়ান, তিনিই সবল। সব প্রার্থীই সবল।
সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার পর ইসি রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কী না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি নির্বাচন কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দে ও নিরপেক্ষ করতে পারি, সে বিষয়ে প্রাক প্রস্তুতি সভা হয়েছে। এ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আমাদের কী করণীয় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি চ্যালেঞ্জের মতো। আমাদের বিপদ ঘটে যাবে এ রকম কোনো তথ্য সভায় উঠে আসেনি। যদি কখনও এমন আসে, আমরা মোকাবিলা করব।
তিনি জানান, রাজশাহী সিটি নির্বাচনের আগে আচরণ বিধি প্রতিপালন ও সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে তিনি রাজশাহী এসেছিলেন। এখানে তিনি এখন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এবারের নির্বাচনে যে ইভিএম মেশিন ব্যবহৃত হবে তা আগের চেয়ে আধুনিক ফলে নির্বাচনে আগে ইভিএম নিয়ে যে জটিলতা দেখা দিতো তা বহুলাংশে কমে আসবে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের লক্ষে লাগানো হবে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া নির্বাচনে সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হবে না বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। নতুন বিধিমালা নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে উল্লেখ করে অচিরেই তা নিরসন হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি যেহেতু একটা সুন্দর নির্বাচন হবে, প্রার্থীরা আচরণবিধি যেন ঠিকভাবে প্রতিপালন করেন। আমি কিন্তু নির্বাচনি এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছি। যত পোস্টার আগেই সাটানো হয়েছিল, অলরেডি অপসারণ হয়েছে। আমরা যদি আচরণবিধিটা প্রতিপালন করাতে পারি, নিশ্চয় একটা সুন্দর ইলেকশন হবে। যে কোনো ধরনের আচরণবিধি ভঙ্গ করলে আমরা সেটার ব্যবস্থা নেব।
নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের কোনো বাধা নেই জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, তবে সাংবাদিকরা ভোটকক্ষের মধ্যে যদি একসঙ্গে ১০ জন ঢুকে যান, তাহলে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হবে। সাংবাদিকরা ভোটকক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন। এতে কোনো বাধা নেই। আমরাও চাই সাংবাদিকরা ভোটের চিত্রটা জনগণের মাঝে তুলে ধরুক। আমরাও চাই সাংবাদিকরা সঠিক বিষয়টা তুলে ধরুক। না হলে আমরা ব্যবস্থা নেব কী করে?
ইভিএমে অনেকের আঙ্গুলের ছাপ না মেলার বিষয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যত ভোট নিয়েছি, এক পার্সেন্টও হয় না যে তারা ভোট দিতে পারে না। মেয়েরা হাতে মেহেদি দিয়ে যায়, সে কারণে ছাপ মেলে না। কিছুক্ষণ চেষ্টা করলে আবার আসে। এটির সংখ্যা কিন্তু খুবই কম। কেউ কিন্তু বলতে পারেনি, সে ভোট দিতে পারেনি। আগে দুই আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হতো, এখন ১০ আঙ্গুলেরই ছাপ নিচ্ছি। একটি না একটির ছাপ মিলবে।
বিকেল ৩টায় সার্কিট হাউজে বৈঠক শুরু হয়। শুরুতেই বৈঠক থেকে সাংবাদিকদের বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠকে। এতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে থেকেও বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা অংশ নেন।
এর আগে আগামী ২১ জুনের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার সভা করেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ। এতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ও পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমানসহ নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।