নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস এখন বহিরাগত দালালদের নিয়ন্ত্রনে ঘুষ ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) খাদেমুল ইসলাম প্রায় ৪ বছর ধরে একই অফিসে থাকায় সেবা গ্রহিতাদের কাছ থেকে অনৈতিক ভাবে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ওই অফিসে নায়েব খাদেমুলের পাশে বসে চুক্তি ভিক্তিক কম্পিউটার অপারেটর তুহিন নামের এক যুবক টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না।
ভূমি সংক্রান্ত যেকোন সেবার বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা। এসব দুর্নীতিবাজ ব্যাক্তির কারনে ভুমি অফিস এখন গ্রাহকদের হয়রানি নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়, জমির পর্চা (খসড়া) তুলা সহ ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিক ভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে।
সেবা গ্রহিতাদের অভিযোগ, চুক্তির টাকা ছাড়া কোন ফাইলই নড়ে না। টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ে কোন কাজ আদায় করা যায় না। ওই ভূমি অফিসের কর্মকর্তা আর বহিরাগত দালালরা গ্রাহক থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার পরও বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের বারান্দায় খাজনা দেয়ার বইতে দীর্ঘবছরের বহিরাগত দালাল খামারু হোল্ডিং খুলছে।
জমির খাজনা দিতে আসা লোকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, খামারু বছরের পর বছর এই অফিসে বহাল তবিয়তে ঘুষ বাণিজ্য করে আসছেন । যে তহশীলদার বদলি হয়ে আসুক না কেন , তার কাছে সবাই কুপোকাত। তারা জানান, খামারু ঘর জামাইয়ের মত অফিসেই থাকেন জামাই আদরে। অফিসের একটি ঘরে তার আস্তানা তিনি থাকেন ঘুমান ওই অফিস ঘরেই।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ভুক্তভোগী জানান, ভুমি অফিসের দালাল খামারু জমি খারিজের জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ঝামেলায় পড়ার ভয়ে টাকা দিয়ে আবেদন করি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে দালাল খামারু ভুমি নায়েব খাদেমুলের সাথে মধ্যস্থা করে থাকেন।
তার নিয়ন্ত্রনে থাকা অফিসের ঘরে বছরের পর খারিজের নথি আটকে রেখেছেন। হররানির স্বিকার ভুক্তভোগী রা বছরের পর বছর ধর্ণা দিয়ে কাজ হচ্ছে না!
সরেজমিনে, অফিস ঘরে ঢুকতেই দেখা গেল ভিন্ন চিত্র । সকলেই যেন দৌড়া-দৌড়ি শুরু করেছেন । নায়েবের পাশে বসা যু্বক তুহিন নামের কম্পিউটার অপারেটর কাছে। সে খাজনা দেওয়ার লোকের কাছে থেকে রেজিস্টেশন করে দেয়ার নামে ২০০ টাকা নিতে বাগবিতন্ডা করছে । পরে জানা গেল , কম্পিউটার অপারেটর তুহিন ই তো অফিসের বস । তিনি অনলাইনের সকল খাজনা ও খারিজের কাজ করে থাকেন । খারিজের আবেদনের জন্য তিনি ১ দলিলের জন্য ৮০০ টাকা করে নেন । তারপরে দলিল বেশি হলে পরের দলিলের সাতে ৪০০ টাকা করে যোগ করতে দিতে হয় । এছাড়া অন্য কোথাও আবেদন করলে সেই খারিজ বাতিলের প্রস্তাব দেন । ভুমি নায়েব খাদেমুল কম্পিউটারের কোন কাজ জানেন না তাই এই তুহিনের কাছে নায়েবসহ এলাকাবাসি জিম্মি হয়ে গেছেন ।
জানতে চাইলে শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা ( নায়েব) খাদেমুল ইসলাম বলেন, খামারু উমেদারের দায়িত্বে আছে। তবে তিনি উমেদার খামারু, কম্পিউটার অপারেটর সজিব ও তুহিনকে নিয়ে গভীর রাত পযর্ন্ত অফিস করার কথা স্বিকার করেন। অফিসে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাজ আমরা করবো। এসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশ ছাড়া এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না। স্যারের নির্দেশ নিয়ে এলাকায় আসতে হবে ।
এব্যাপারে, পুঠিয়া উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভুমি) আরাফাত আমান আজিজ মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, উপজেলায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। শিলমাড়িয়া ভুমি অফিস বিষয়ে তদন্ত পুর্বক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
চরম দুর্নীতিগ্রস্থ এই নায়েব খাদেমুলসহ দালালদের শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিস থেকে দ্রুত অপসারণের জন্য জোর দাবি জানিয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসি ।