November 27, 2024, 8:43 am

রাসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নতুন মুখের ছড়াছড়ি?

রাসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নতুন মুখের ছড়াছড়ি?

নাহিদ ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ত্রিশটি ওয়ার্ডেই চলছে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ। তবে এই দৌড়ঝাপের পাল্লা আরো বেশি ভারি করছে ‘নতুন মুখ’ আগত প্রার্থীদের অংশগ্রহণ। মন্তব্য স্থানীয়ভোটারদের। পুরাতন ও বর্তমানে দায়িত্বরত কাউন্সিলদের নির্বাচনমূখী ডামাডোল নেহাতই কম না হলেও নতুনদের দৌরাত্ম আর প্রচেষ্টার তুলনায় যথেষ্ট কম বলে জানান স্থানীয়রা। তবে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া নতুনদের এই প্রচেষ্টাকে প্রশংসনীয় বলেও মন্তব্য অনেকের। কিন্তু, কোন কোন ওয়ার্ডে নতুন মুখের আগমন হিসেবে এমন কিছু প্রার্থীর দেখা মিলছে, যারা নিজেদের পরিচয়ে সমাজের মানুষের কাছে খুব একটা পরিচিত নন। বিগত কোন সময়ই তেমন কোন সমাজগত কাজে তাদেরকে কেউ তেমনভাবে দেখেনও নি। যার কারণে, নির্বাচনমূখী দৌড়ঝাপে তাদেরকে নির্বাচনী মাঠে আকস্মিকভাবে অবতীর্ণ হতে দেখে অনেকেই হতভম্ব হচ্ছেন স্থানীয়রা। কোথাও কোথাও তাদেরকে নিয়ে চলছে নানাকথন। হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনাসহ নানামুখি যুক্তিতর্কও। সরেজমিনে রাসিকের ৩০টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডেই গড়ে প্রায় ৩ জন করে নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটেছে। সে হিসেবে এবারের রাসিক নির্বাচনে প্রায় ১০০ মতো নতুন মুখের আগমণ ঘটেছে। যাদেরকে অধিকাংশ স্থানীয়রাই তেমনভাবে চেনেন না। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের আকস্মিক আবির্ভাব চিন্তায় ফেলেছে স্থানীয়দের মাঝে।

বড় কিংবা ছোট ভাই, চাচা কিংবা মামা, খালু কিংবা ফুপা, শ্যালক কিংবা বোন জামাই, আবার কোথাওবা অন্তরঙ্গ বন্ধু; এই ধরনের সমজাতীয় সম্পর্ক ও স্বজনদের পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে নির্বাচনমূখী দৌড়ঝাপে ব্যস্ত তারা-সূত্র স্থানীয়দের। সেই সূত্রের সত্যতাও মেলে নগরীর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড সরেজমিন পরিদর্শনের পর। অনেকের বক্তব্যানুযায়ী, মনোনয়নপত্র উত্তোলন করা নতুন প্রার্থীদেরকে অধিকাংশ স্থানীয়রা যথার্থপন্থায় তেমনভাবে না চিনলেও (সমাজসেবামূলক কোন কাজ বা রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা) কেউ কেউ আবার তাদেরকে তকমা দিচ্ছেন ‘হেভিওয়েট প্রার্থী’ হিসেবেও! সরেজমিন ঘুরে সেই মৌখিক ‘হেভিওয়েটের’ সত্যতাও মেলে। কিন্তু আত্মীয়তা ও বন্ধুমহলের পরিচয়েই কি প্রথমবার এসেই হেভিওয়েটের খাতায় নাম লেখালো তারা। নাকি ভোটযুদ্ধে নিজেদেরকে এগিয়ে রাখার অন্যকোন পন্থাও অবলম্বন করছেন তারা। এমন প্রশ্ন এখন অনেক সচেতন ব্যক্তির। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, একাধিকবার কাউন্সিলর পদে অধিষ্ঠিত থেকেও যারা ওয়ার্ডবাসির কাঙ্খিত নাগরিক সেবা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছেন; তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেবার অভিপ্রায় নিয়ে স্থানীয় একাংশের মতামতের উপর নির্ভও করেই হয়তো অচেনা প্রার্থীদেরকে এবারের নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে কেউ কেউ দাড় করানোর চেষ্টা করছেন। একাধিকবার কাউন্সিলর পদে থাকা বর্তমান দায়িত্বরত কোন কোন কাউন্সিলর প্রার্থীও নাকি ঐসকল ‘নিউকামার’ প্রার্থীদেরকে অনেকটাই গুণতীর মধ্যে রেখেছেন বলেও আভাস আসছে। আসন্ন নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে বিজয়ী হবার লড়াইয়ে সেই অচেনা ও নতুন মুখের প্রার্থীদের বিজয়ী হবার জোর দাবির কথাও বলছেন তাদের অনুসারিসহ স্থানীয়দের একাংশ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে, উক্ত ওয়ার্ডের সচেতন ব্যক্তিরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, দেশের অনেক স্থানেই নতুন অচেনা মুখের প্রার্থীরা তাদের অর্জিত কালো টাকার একাংশকে সাদা করার একটি পন্থা হিসেবেও বেছে নেন নির্বাচনমূখী অংশগ্রহণের মতো বিষয়টিকে। তবে, রাজশাহীর মতো ছোট্ট একটি শহরে সেই অসুদপায় অবলম্বন হয়তোবা কেউ করবেন না। কিংবা করার হয়তো তেমন কোন সুযোগও নেই বলেও মন্তব্য অনেকের। কোন কোন ওয়ার্ডে, এমনও অভিযোগ উঠেছে, হঠাৎ করে আবির্ভাব হওয়া কিছু প্রার্থী নিজের ভোটেরপাল্লা ভারি করার সৎ উদ্দেশ্যে ব্যয় করছেন অসৎ পন্থায়। যেটা কিনা নির্বাচন কেন্দ্রিক এক ধরণের ‘ওপেন সিক্রেট অফেন্স’ হিসেবেও পরিচিত সমাজের কাছে। ‘নতুনমুখের আকস্মিক আগমনের বিষয়গুলো অনেকের সূরে মন্দ হলেও মন্দের মধ্যেও ভাল কিছু যে আসবে না, তা কিন্তু নয়। নতুন মুখের মধ্যেও থাকতে পারে যোগ্য কোন কাউন্সিলর প্রার্থী’ এমন প্রশ্নের উত্তরে চায়ের আড্ডা স্থানীয় বয়স্ক ব্যক্তি ও উচ্চশিক্ষিত ভোটারগণ প্রত্যুত্তরে জানান, ‘কোন কোন ওয়ার্ডে প্রার্থী হিসেবে নিজেদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন যথার্থ বয়স ও ব্যক্তিত্বপূর্ণহীন ব্যক্তিরাও। যেটি নিয়ে স্থানীয় মুরুব্বী, বয়স্ক ও সমাজের সম্মানীত ব্যক্তিগণ নিরপেক্ষতাবলম্বনে কিছুটা ক্ষোপ প্রকাশ করেছেন। বেশ কয়েকটি উদাহরণ টেনে স্থানীয় বয়স্করা মন্তব্যের সূরে জানান, ‘পূর্ববর্তী সময়ে এমনও রেকর্ড আছে যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত প্রথমশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার মতো সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানীত ব্যক্তি; অপরিপক্ক ও দায়িত্বহীন কিছু জনপ্রতিনিধি ও উনার কার্যালয়ের দায়িত্বে ধাকা ব্যক্তি কর্তৃক নিঘৃত হয়েছেন। কাঙ্খিত সেবা নিতে এসে অসম্মানপূর্বক ফিরে যেতে হয়েছে একাধিকবার। সর্বোচ্চ সম্মানীত এমন ব্যক্তিকে একটিবার বসতেও বলা হয়নি। শোনার কোন আগ্রহও দেখানো হয়নি সেবাগ্রহীতার কথা, চাহিদা বা অভিযোগের বিষয়টিকে! আবার কোন কোন ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতারা গেলে কোন কোন সেবার বিপরীতে অনৈতিক পন্থায় সরকারি নির্ধারিত ফি’র বিপরীতে বেশি নেবারও অখিযোগ নেহাতই কম নয়। আবার বয়স-যৌলুস, স্বজনপ্রীতি আর অপরিপক্কতার কারণে সরকার থেকে আসা ত্রাণ ও ভাতার বিতরণেও ধরা পরে অযোগ্যতার প্রমান। তাই বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থীদের এই পদে অবতীর্ণ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য সচেতনদের। শুধু অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজে কিংবা ওয়ার্ডে নিজেকে পরিচিতি করাতে হবে এমন ধরণের দূরভীসন্ধি কিংবা অসৎ অভিপ্রায় ও উদ্দেশ্য থাকলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভোটের মতো জাতীয় ইস্যুর অপব্যবহার কাম্য হতে পারেনা কোন নাগরিকের কাছ থেকে বলে মন্তব্য করলেন নিজেদের নাম-পরিচয় অব্যক্ত রেখেই। তাই যিনি প্রার্থী হবেন, উনাকে হতে হবে মার্জিত, ভদ্র, সদাচার, সামাজিক, পরপকারি, দায়িত্বপরায়ণ, বুদ্ধিমান সহ আরো বেশকিছু গুণের অধিকার। তবেই, সকল শ্রেণী ও পেশাজীবি মানুষ সেবা গ্রহণে কাউন্সিলর কার্যালয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ হবে। এমনটাই প্রত্যাশাপূর্বক উদাহরণ টেনে মন্তব্য জুড়ে দিলেন সচেতন ও বয়স্ক ব্যক্তিগণ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.