নিজস্ব প্রতিবেদক: একটি সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার ঘটনার পর রাজশাহীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা হয়েছে। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদের ওই বক্তব্যের জেরে সাত থানায় দায়ের করা নয় মামলা আসামী করা হয়েছে দুই শতাধিক। যাদের মধ্যে ৮৫ জন বিএনপির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৭ জনকে বলে দাবি করেছে বিএনপি নেতারা।
এর মধ্যে পুঠিয়া থানায় প্রথম দায়ের করা মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এতে আবু সাঈদকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। এর পর আবু সাঈদকে একমাত্র আসামি করে মামলা করা হয় নগরের কাশিয়াডাঙ্গা ও জেলার মোহনপুর থানায়।
জানা গেছে, নগরের বোয়ালিয়া ও কাশিয়াডাঙ্গা থানায় দুটি করে; নগরের চন্দ্রিমা, রাজপাড়া, কর্ণহার এবং জেলার পুঠিয়া ও মোহনপুর থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৮৫ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। তিনটি মামলায় আসামি আবু সাঈদ চাঁদ। পুঠিয়া ও মোহনপুর থানার মামলাটির বাদী হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। বাকি মামলাগুলো পুলিশ বাদী হয়ে করেছে।গত শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে আবু সাঈদ বলেন, ‘আর ২৭ দফা, ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। এক দফা, শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য যা যা করার দরকার, আমরা করব।’ এরপর একের পর এক মামলা হতে থাকে।মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, নাশকতার ব্যাপারে পুলিশের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তা ছাড়া আসামিরা বিভিন্ন জায়গায় একত্রিত হয়ে নাশকতার চেষ্টা করেছেন ও নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছেন। পুলিশের ওপরে হামলা ও সরকারি জানমাল ধ্বংসের চেষ্টা করেছেন- যা পুলিশের গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে মিলে গেছে। ঘটনার সময়গুলো কাছাকাছি হওয়ার কারণে মামলাগুলো পরপর হয়েছে।
থানা পুলিশের একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যের মতে, প্রথম মামলাটি করা হয় শুক্রবার রাতে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায়। বিস্ফোরক আইনে থানার এসআই ইফতেখার মোহাম্মদ আল আমিনের করা মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ আজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় আটক করা ১১ জনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁদের মধ্যে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা রয়েছেন।
একই থানায় সোমবার দ্বিতীয় মামলাটি করেন এসআই মাহফুজুর রহমান। এতে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা আছেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় চারজনকে।
নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানায় বিস্ফোরক আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা হয়েছে। সোমবার প্রথম ও মঙ্গলবার দ্বিতীয় মামলাটি হয়েছে। দুটি মামলায় তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁরা সবাই বিএনপির কর্মী।
বিস্ফোরক আইনে করা প্রথম মামলাটিতে আবু সাঈদকে আসামি করা হয়। এটির বাদী এসআই মীর আরমান হোসেন। এতে মোট ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলাটির বাদী থানার এসআই ইমরান হোসেন। এতে মোট চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। উভয় মামলায় তিনজন করে আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।সোমবার নগরের রাজপাড়া থানায় রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের উদ্দেশে গোপন বৈঠকের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। থানার এসআই আবদুল জলিল বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলায় আবু সাঈদসহ বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতকে আসামি করা হয়। মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি এবং একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বিস্ফোরক আইনে নগরের চন্দ্রিমা থানায় গত শনিবার একটি মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক প্লাবন কুমার সাহা। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আলামত হিসেবে ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ জব্দ করা হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল থেকে তিন আসামিকে আটক করা হয়। এ মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
নগরের কর্ণহার থানায় নাশকতার অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামির করে সোমবার একটি মামলা করা হয়েছে। থানার এসআই আবদুল হাকিম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। এ ছাড়া গত রোববার রাতে আবু সাঈদকে একমাত্র আসামি করে পুঠিয়া থানায় মামলা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল কালাম আজাদ। এ মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ আনা হয়। এছাড়াও সোমবার মোহনপুর থানায় অপর একটি মামলা হয় চাঁদকে আসামী করে। এ মামলা করেন উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি একরামুল হক।
নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানায় করা প্রথম মামলায় এবং রাজপাড়া থানার মামলায় আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন বানচালের চেষ্টা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের গোপান বৈঠক করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ দুটি এজাহারে আবু সাঈদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ রয়েছে। নগরের অন্য মামলাগুলোতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকের উল্লেখ করা হয়। এসব মামলার এজাহারে আলামত হিসেবে বিস্ফোরিত বা অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী বলেন, রাজশাহী শহরের কোথাও একটি পটকাও ফোটেনি। অথচ পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা দিচ্ছে। এ পর্যন্ত তাঁদের ২৭ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত পুলিশ আরও মামলা দেবে বলে আশঙ্কা করেন এরশাদ আলী।