ঢাকা: এবারের ঈদযাত্রায় ৩১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত ও ৭৭৪ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তবে সড়ক, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪৪০ জন ও আহত হয়েছে ৭৯১ জন।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, গত সাত বছরের ঈদুল আজহার মধ্যে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে এবার।
যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে অতীতের মতো আমরা একটিও যানবাহন সড়কে বাড়াতে পারিনি। এবারে সড়কে দীর্ঘ যানজটও দেখা গেছে।
এছাড়া যাত্রীদের ৩০০ টাকার ভাড়া ২০০০ টাকা পর্যন্ত গুণতে হয়েছে। অনেক স্বপ্ন এবার বাড়ি ফিরতে পারেনি। ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলে ৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিগত ঈদুল আজহার তুলনায় এবার সড়ক দুর্ঘটনা ২৪.৭৬ শতাংশ ও নিহত ৩১.৪১ শতাংশ বেড়েছে। বিদায়ী ঈদযাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় ৪৪০ জন নিহত ও ৭৯১ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ঈদুল আজহায় লকডাউনের কারণে যাতায়াত সীমিত থাকায় এবারের ঈদে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। এবারের ঈদে রাজধানী ঢাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখ। এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় চার কোটি মানুষের যাতায়াত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করায় গণপরিবহন সংকটের সুযোগ নিয়ে এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি ভাড়া নৈরাজ্য হয়েছে। এছাড়া নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বিভিন্ন রুটে চার ঘণ্টার যাত্রা ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টাও লেগেছে। পথে পথে যাত্রী হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্যের পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন বাসের পাশাপাশি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, মুরগিবাহী প্রিজন ভ্যানেও যাত্রী যাতায়াত করতে দেখা গেছে। বরাবরের মতো ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয়, টিকিট কালোবাজারি, টিকিট পেতে বিড়ম্বনাসহ নানা ভোগান্তি রেল যাত্রীদের পিছু লেগেই ছিল। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী সংকটে দেশের বিভিন্ন নৌপথে ভাড়া কমানো হলেও ঈদযাত্রায় টিকিট কালোবাজারি, ভাড়া নৈরাজ্য নৌপথের যাত্রীদের আগের মতোই ছিল।
মহাসচিব বলেন, ঈদযাত্রা শুরুর দিন গত ৩ জুলাই থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত ও ৭৭৪ জন আহত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২৫টি ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ১৫ জন আহত এবং তিনজন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে যৌথভাবে ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় ৪৪০ জন নিহত ও ৭৯১ জন আহত হয়েছে। বিগত ৭ বছরের ঈদুল আজহায় যাতায়াতের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দুটোই সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১১৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত, ৬৮ জন আহত হয়েছে, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫.৪২ শতাংশ, নিহতের ৩২.৯১ শতাংশ।
এ সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আহত ১৫৭ জন চালক, আটজন পরিবহন শ্রমিক, ১০৬ জন পথচারী, ৬২ জন নারী, ৫১ জন শিশু, ৩৬ জন শিক্ষার্থী, ছয়জন সাংবাদিক, চারজন চিকিৎসক, পাঁচজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ছয়জন শিক্ষক, ছয়জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও একজন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছেন তিনজন পুলিশ সদস্য, একজন সেনাবাহিনীর সদস্য, একজন আনসার সদস্য, ৩৬ জন নারী, ৩৬ জন শিশু, ২৯ জন শিক্ষার্থী, পাঁচজন শিক্ষক, ১২৪ জন চালক, সাতজন পরিবহন শ্রমিক, আটজন পথচারী, তিনজন সাংবাদিক, চারজন চিকিৎসক ও তিনজন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
তিনি বলেন, সংঘটিত দুর্ঘটনায় মোট যানবাহনের ২৯.০৩ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩.১৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ কাভার্ডভ্যান-লরি, ৫.৬২ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৩.৯৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা মাহিন্দ্রা, ১১.৪৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৯.৩৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল ও ১৭.৩৩ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৩.১৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫০.৭৮ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৮.৪৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৬.৮৯ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে ও ০.৩১ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁছিয়ে ঘটেছে। মোট দুর্ঘটনার ৩২.৯১ শতাংশ জাতীয় সড়কে, ৪৬.৭০ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে, ১৫.৩৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সেইফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এলায়েন্সের (শ্রোতা) সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন প্রমুখ।