তানোর প্রতিনিধি: প্রচন্ড গরম আর খরতাপে বিলের পানি আগুনের মত হয়ে উঠছে, একারনে কয়েক সপ্তাহ ধরে মাছ পাচ্ছে না জেলেরা। রাজশাহীর তানোরে বিলকুমারি বিলে এমন অবস্থা চলছে। এতে করে বিল পাড়ের প্রায় পাঁচশতাধিক জেলে পরিবার চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
একদিকে কিস্তি অন্যদিকে ব্যবসা নেই আবার সংসার পরিচালনা। মহা বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবি পাড়া হিসেবে পরিচিত পৌর সদর শীতলী ও কুঠিপাড়ার জেলে পরিবারেরা। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। এমন কি কিস্তির টাকা দিতে না পেরে অনেকে পালিয়ে থাকছেন। গভীর রাতে আসছেন কিস্তির লোক বাড়িতে। ওই রাতেও কিস্তি আদায়কারীরা দরজায় কড়া নাড়ছেন। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছেন না।ফলে এমন কঠিন সময়ে সরকারী সহায়তা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন মৎজীবি নেতারা। আবার সমানে ঈদূল আজহা, পরিবারের সদস্যদে একটু মাংস পোলা যেন সোনার হরিন হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, নাব্যতা সংকটে ভূগছে পৌর সদরের ঐতিহা বহনকারী বিল কুমারি।বিলের মুল অংশ ধরা হয় শেখ রাসেল মিনি স্টাডিয়ামের উত্তর পূর্ব দিকে। প্রায় ৫০-৭০ বিঘার জলাশয়ে পাঁচশতাধিক জেলে পরিবারের জীবন জীবিকা চলে বছর জুড়ে। চলতি মাসের শুরু থেকেই তীব্র তাপদাহ ও প্রচন্ড সূর্যের প্রখরতা। যার কারনে বিলের পানি ব্যাপক গরম হয়ে পড়ছে।
শীতলীপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবি মজিদ ওরফে বিসু জানান, খরতাপের কারনে একেবারে সিমিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এখন মাছ মিলছেনা, যতটুকু মিলছে গরমে অর্ধেক মরে যাচ্ছে। আগে যদি ৫০০ টাকা হত এখন ১৫০-২০০ টাকাও মিলছে না।আরেক মৎস্যজীবি মোজাম জানান, কি আর বলব, সংসার চালাবো, না কিস্তি দিব, কোন কিনারা খুজে পাচ্ছি না। কোন দিন ২০০ টাকার মাছ পেলে পরের দিন আর মিলছে না। দু বেলা খাবার জুটছে না। বাজারে চাল ডাল, সবজসহ সকল পণ্যের দাম বাড়তি। এককেজি চাল নিম্মে হলেও ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কয়েকমাস আগে ওএমএসের ৩০ টাকা কেজির চাল বিক্রি হত সেটাও বন্ধ। এখন না মরে বেচেঁ থাকা। আবার বিল থেকে জাল চুরি হয়েছে। যাকে বলে মরার উপর খাঁড়ার ঘা।আরেক মৎস্যজীবি আজিজুর জানান, প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকার জাল বিলে রয়েছে। আগে প্রতিদিন নিম্মে ৫০০-৭০০ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারতাম, কিন্তু এখন আর মাছ মিলছে না, কিন্তু অতিরিক্ত গরমের কারনে অর্ধেক মাছ মরে যাচ্ছে। কুঠিপাড়া, শীতলীপাড়া ও গোকুল মৎস্যজীবি পাড়ার একাধিক ব্যক্তিরা দু:খ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মত কষ্টে কেউ দিন পার করছে না। কিন্তু এসময়ও পৌরসভা বা সরকার থেকে কোন সাহায্য মিলছে না।
চাল না কিনলে হাড়ি চড়ে না। কিন্তু চাল কিনলে সবজি কিনা যাচ্ছে না। অনেকে পান্তা, খিচড়ি খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। এসময় বিলে প্রচুর পানি থাকে, এবার পানি নেই, মাছও তেমন মিলছে না। আর প্রচন্ড গরমে ও তাপপ্রবাহের কারনে জালে যে সব মাছ মিলছে প্রায় সবই মরে যাচ্ছে। বিলের মাছ আমাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র ভরসা। বৃষ্টির পানিও হচ্ছে না, এজন্য বিলের পানিও বাড়ছে না, যার কারনে আমাদের সংসার চলছে দূর অবস্থায়।উপজেলা মৎস্য অফিসার বাবুল হোসেন জানান, এটা অর্থ বছরের শেষ মাস, এমাস পড়ে যে বরাদ্দ পাওয়া যাবে অবশ্যই যারা প্রকৃত মৎস্যজীবি তাদেরকে সহযোগী তা করা হবে।পৌর মেয়র ইমরুল হক জানান, পৌরসভায় আলাদা কোন বরাদ্দ থাকে না। আগামী ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারী ভাবে চাল বরাদ্দ দেয়, সেখানে মৎস্যজীবিদের অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিল্লাল হোসেন বলেন, মৎস্য অফিসারের সাথে আলোচনা করে আগামী অর্থ বছরে সরকারী ভাবে কোন বরাদ্দ পেলে মৎস্যজীবিদের সহায়তা করা হবে।