নিউজ ডেস্ক: জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হ’ত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার ভোরে তাকে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়ন থেকে আটক করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শনিবার ভোরে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে পঞ্চগড় থেকে আটক করা হয়েছে। তাকে ঢাকায় আনা হচ্ছে।
দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, জামালপুরে সাংবাদিক নাদিম হ’ত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত বাবু চেয়ারম্যান শুক্রবার বিকেলে তার চাচা মমতাজ আলীর বাড়িতে আসেন। শনিবার ভোরের দিকে র্যাব পরিচয়ে বাবুসহ তার সঙ্গে থাকা তিনজনকে ধরে নিয়ে যায়।
এর আগে শুক্রবার রাতে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তালুকদার বাবুল স্বাক্ষরিত এক পত্রে ইউপি চেয়ারম্যান বাবুকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুর নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অপকর্ম নিয়ে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন বাংলানিউজ ও একাত্তর টিভির সাংবাদিক নাদিম। সংবাদ প্রকাশের জেরে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে নাদিমের বিরুদ্ধে মামলাও করেন বাবু। আদালত ওই মামলাটি খারিজ করে দেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বুধবার রাতে বাবুর বাহিনী নৃশংস হামলা চালায় তাঁর ওপর। চেয়ারম্যান বাবু ও তাঁর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত হামলার নেতৃত্ব দেন। বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তিন সন্তানের জনক চল্লিশোর্ধ্ব নাদিমের।
নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান বাবু তাঁর স্বামীর ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাতসহ ১০-১২ জন মিলে হামলা করে তাঁকে হ’ত্যা করেছে। হামলার সময় বাবু চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলের অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান বাবুর অপকর্ম নিয়ে লেখালেখির পর নাদিমের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। সেই মামলাটি বুধবার ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেন। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন নাদিম। এর পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাদিমের ওপর হামলা হয়।
হামলায় জড়িত বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক আল মোজাহিদ বাবু বলেন, নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তারপর তাঁকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন বাবুর ছেলে রিফাত ও তাঁর গুন্ডা বাহিনী। ঘটনার সময় ওই গলিতে অন্ধকারে আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবু।
পরে স্থানীয়রা নাদিমকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে রাতেই তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা কয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন দুপুরে মারা যান তিনি।
শুক্রবার শোক আর শ্রদ্ধায় সাংবাদিক নাদিমকে চিরবিদায় জানানো হয়। সকাল ১০টায় বকশীগঞ্জ নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা ও দুপুর ১২টায় নিলক্ষিয়া ঈদগাঁ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাদা-দাদির কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।