নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ভূমি অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি-অনিয়ম হয় এটা সবারই জানা! রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা ভূমি অফিসটি যেন ঠিক তেমনি, ঘুষের জন্য উন্মুক্ত! প্রকাশ্যে এ অফিসটিতে চলে ঘুষ বাণিজ্য।
ঘুষ দিলেই কাজ, না দিলে পড়তে হবে বিপাকে গ্রাহকদের । অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্যের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এই ভূমি অফিসটি। বলা যায় কর্মচারিদের ঘুষের রাম রাজত্ব কায়েম হচ্ছে এ (ভূমি) অফিসে।
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে, ভূমি অফিসের জমা সহকারি জীবননেছা মুক্তি ও পিয়ন মোকলেসুর রহমান ও নাইটগার্ড রমজানের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ভূমি অফিসের জমা সহকারী জীবননেছা ও পিয়ন মোকলেসুর খোলামেলা ভাবে জনৈক এক সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে ঘুষের টাকা গ্রহণের জন্য দর-কষাকষি করছে। এমন একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হওয়া ভিডিও ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন লোকজনের কাছে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক ভুক্তভোগী, খারিজের ডিসিআরের জন্য সরকারি ১১৫০ টাকা দিতে এসে বাধ্য হয়ে ২০০০ টাকা দিচ্ছেন। অফিসের জমা সহকারী জীবননেছা মুক্তি বলছেন, দুই হাজার টাকার কম হলে নিতে পারবেন না । তার সাথে থাকা অফিসের পিয়ন মোকলেসুর বলছে, আপনার টাকা কি আমরা পকেট থেকে দিবো । নাজির সাহেবের কাছে প্রত্যক ফাইলের জন্য ২ হাজার করে টাকা দিতে হয় । ভূক্তভগেী জমা সহকারীকে বলেন, আপা মনটা নরম করে ১৫০০ টাকা নেন । কিন্তু কে শোনে কার কথা । তিনি টাকা কম নিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন । এবং বিরক্ত বোধ করেন । অবশেষে ওই ভুক্তভোগী দুই হাজার টাকা দিতে বাধ্য হন।
অভিযোগ উঠেছে, পিয়ন মোকলেসুর ডিসিআর দেয়ার নাম করে গ্রাহকদের কাছে প্রত্যক খারিজে ২০০০ টাকা করে ঘুষ নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্বসাৎ করেছেন। কাজ না হলে টাকাও দেন না আবার ডিসিআর ও দেন না এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । ভুক্তভোগি অনেকে এসিল্যান্ডের কাছে অভিযোগ করলে বেতনের টাকা থেকে কেটে নিয়ে দিনে দিনে পরিশোধ করার আদেশ দিয়েছেন বলে জানাগেছে । মাত্র তিন বছরের চাকরীতে মোখলেসুর বিভিন্ন খারিজ কেসের নথি গায়েব , অফিসের বিভিন্ন খারিজের বই গায়েব , মিসকেসের নথি গায়েব করে অসাধুভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের ইমরান আলী বলেন, আমার একমিস কেসের নথি বিবাদীর নিকট থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে গায়েব করে দিয়েছিল । পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও ব্যবস্থা নেয়নি কতৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখক বলেন, সাধারন জনগনের থেকে ডিসিআর দিবে বলে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে রেখেছে পিয়ন মোকলেসুর । চাইতে গেলে বিভিন্ন অজুহাত দেখায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেবাগ্রহীতারা জানান, চারঘাট উপজেলা ভুমি অফিসের অবস্থা খুব খারাপ। সবাই ঘুষ বাণিজ্য ব্যস্ত থাকেন । যেন দেখার কেউ নেই! এই অফিসের বাস্তব চিত্র বলতে অফিসের নাইটগার্ড রমজানকে আবেদন করতে গেলে দিতে হয় ৫০০ টাকা । তিনি এই অফিসে প্রায় ৯ বছর যাবৎ রয়েছে । রমজান এসব ঘুষ বাণিজ্যের মধ্যস্থতা করে থাকেন । এরপর জমা সহকারীকে ২০০ টাকা দিয়ে ফাইল জমা দিতে হয় । নায়েব কে ১ হাজার দিয়ে রিপোর্ট নিতে হয় । শুনানীর সময় ২০০ টাকা পিয়ন মোকলেসকে দিতে হয় । নোটিশের জন্য আনোয়ারকে ২০০ এছাড়া কেস পাস হলে জমা সহকারীকে ২ হাজার টাকা দিতে হয় । শেষে তহশীল অফিসে হোল্ডিং খুলতে গেলে দিতে হয় ৫০০ টাকা। এটাই হলো এই অফিসের বাস্তব ঘুষ বানিজ্যর চিত্র ।
দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে হয়রানিসহ এখানে ঘুষের বাণিজ্যের রাম-রাজত্ব কায়েম করে আসছেন তারা । সম্প্রতি ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর ঘুষখোশদের বাঁচাতে তাদের দালালরা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন।
চারঘাট উপজেলা ভূমি অফিসের জীবন নেছা, মোকলেসুর ও নাইটগার্ড রমজানের বিরুদ্ধে ঘুষ ক্যালেঙ্কারীসহ অনিয়ম-দুর্নীতির নানান অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
ঘুষ লেনদেনের ফাঁস হওয়া ভিডিওর বিষয়টি তার বলে স্বিকার করেছে জমা সহকারি জীবননেছা। তিনি বলেন, আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন।
এব্যাপারে,চারঘাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) মানজুরা মুসারফ বলেন, শুনেছি ভিডিও ফাঁস হওয়ার কথা। সত্যতা পেলে তদন্ত পুর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।