November 23, 2024, 4:54 pm

News Headline :
হজের ফরজ তিনটি, ওয়াজিব ছয়টি

হজের ফরজ তিনটি, ওয়াজিব ছয়টি

হজ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা, দৃঢ়সংকল্প করা ইত্যাদি। শরীয়তের পরিভাষায়, মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট কার্যাবলী সম্পাদন করাকে হজ বলে। হজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি যা স্রষ্টার প্রতি অগাধ বিশ্বাস অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও পূর্ণ আনুগত্যের প্রতীক।

স্রষ্টার সঙ্গে বান্দার ভালোবাসার পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপ হজ। জিয়ারতে বাইতুল্লার মাধ্যমে খোদাপ্রেমিক মুমিন বান্দা তার মালিকের বাড়িতে বেড়াতে যায়। অনুভব করে দিদারে এলাহির এক জান্নাতি আবেশ। কলুষমুক্ত হয় গুনাহের গন্ধে কলুষিত অন্তরাত্মা। হজের মাধ্যমে মুমিনের আত্মিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদাতের সমাবেশ ঘটে। প্রত্যেক সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ এবং এর অস্বীকারকারী কাফের।

মহান আল্লাহ তা’আলা এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যার সামর্থ্য রয়েছে বাইতুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে এটা অস্বীকার করবে আল্লাহ বিশ্বজগতের সব কিছু থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আল ইমরান, আয়াত: ৯৭)

মহান আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আরো ইরশাদ করেন, আর মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা করুন। তারা আপনার কাছে আসবে দূর-দূরান্ত থেকে পদযোগে ও সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে আরোহণ করে। (সূরা হজ, আয়াত:২৭)

প্রিয় পাঠক! এখানে সামর্থ্য বলতে শারীরিক ও আর্থিক উভয় প্রকার সামর্থ্য বোঝানো হয়েছে। সুতরাং সামর্থ্যবান হলে সকল প্রকার বাধা-বিপত্তি, দ্বিধা-সংশয় ও ভ্রান্ত ধারণা ছেড়ে দিয়ে অনতিবিলম্বে হজ আদায় করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য বাঞ্ছণীয়। এ ব্যাপারে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা ফরজ হজ আদায়ে বিলম্ব করো না। কেননা তোমাদের জানা নেই, পরবর্তী জীবনে তোমরা কী অবস্থার সম্মুখীন হবে। (মুসনাদে আহমদ: ২৮৬৭)

আর সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যারা হজ না করে মারা যায়, বিচার দিবসের একমাত্র সুপারিশকারী মহানবী (সা.) তাদের ব্যাপারে অত্যন্ত শক্ত মনোভাব পোষণ করেছেন। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যে হজ না করে মারা যায়, সে ইয়াহুদী হয়ে মারা যাক বা খ্রিষ্টান হয়ে মারা যাক, তাতে আমার কোনো পরোয়া নেই। (তিরমিযি: ৮১২)

পক্ষান্তরে যারা মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে হজ আদায় করে, মহানবী (সা.) তাদের ব্যাপারে গুনাহ মাফ ও জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এমনভাবে হজ আদায় করল যে, কোনোরূপ অশ্লীল কথা বা গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়নি, সে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে। (বুখারি: ১৫২১)

প্রিয় পাঠক! এ হাদীসটি গবেষণা করলে জানা যায় যে, মহানবী (সা.) হজের মাধ্যমে ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য বিশেষভাবে তিনটি শর্ত আরোপ করেছেন:

১. হজের লক্ষ্য হতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
২. হজের সফরে অশ্লীল বাক্যালাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
৩.হজের সফর অবস্থায় সকল প্রকার গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রিয়নবী (সা.) আরো ইরশাদ করেন, হজ ও উমরাকারীগণ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার মেহমান। তারা যদি আল্লাহর নিকট দুআ করে, তবে তিনি তা কবুল করেন। আর যদি তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন। (ইব্নে মাযাহ্: ২৮৯২)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, হজ্জে মবরূর তথা মকবুল হজের প্রতিদান হলো জান্নাত। (বুখারি: ১৭৭৩)

হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো হাজী সাহেবের সাথে তোমাদের সাক্ষাত হলে তাঁকে সালাম করবে, তাঁর সাথে মুসাফাহ্ করবে এবং তিনি নিজ গৃহে প্রবেশের পূর্বে তার নিকট দুআ কামনা করবে। কারণ তিনি নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এসেছেন। (ইবনে মাযাহ: ৩০০৪)

ফতোয়ায়ে শামিতে উল্লেখ করা হয়েছে, হজের ফরজ তিনটি:

এক. ইহরাম বাঁধা। অর্থাৎ হজের নিয়তে ইহরামের কাপড় পরিধান করে তালবিয়াহ পাঠ করা।
দুই. আরাফার ময়দানে অবস্থান (যা হজের সর্বোত্তম রুকন)।
তিন. তাওয়াফে জিয়ারত। এগুলো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ছুটে গেলে হজ বাতিল হয়ে যাবে।

আর হজের ওয়াজিব ছয়টি:
এক. মুযদালিফায় অবস্থান
দুই. কঙ্কর নিক্ষেপ
তিন. কুরবানী করা
চার. মাথা মুন্ডানো বা ছাটা
পাঁচ. সাফা-মারওয়া সাঈ করা
ছয়. মিকাতের বাইরের লোকদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ।

এগুলো অনিচ্ছাকৃত ছুটে গেলে হজ আদায় হয়ে যাবে। তবে দম বা কুরবানী দ্বারা ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।

লেখক: মুফাস্‌সিরে কুরআন ও কলাম লেখক

Please Share This Post in Your Social Media

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.