নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক আবাসিক হলের ক্যানটিনে খাসির মাংসের কথা বলে সনাতন শিক্ষার্থীকে গরুর মাংস খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ্ মখ্দুম (এসএম) হলে এ ঘটনা ঘটে। পরে এই ঘটনার সুরাহা করতে গিয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের হাতাহাতি ও দেশিয় অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে পার্শ্ববর্তী আমীর আলী হল থেকে শাহ্ মখ্দুম হলের ক্যানটিনে খেতে আসেন দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল কুমার। তিনি ক্যানটিনের এক কর্মচারীকে খাসির মাংস আছে কিনা জানতে চান। তখন ওই কর্মচারী খাসির মাংস পাওয়া যায় বলে ওই শিক্ষার্থীকে জানান। কিন্তু ওইদিন ক্যানটিনে খাসির মাংস রান্নাই হয়নি। খাসির মাংসের পরিবর্তে ওই কর্মচারী ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে গরুর মাংস পরিবেশন করেন। পরে খাওয়া শেষে তিনি বিল দিতে গিয়ে খাসির মাংসের কথা বললে ম্যানেজার বেলাল হোসেন বলেন আজ তো খাসির মাংস রান্নাই হয়নি।বিষয়টি জানতে পেরে এসময় ক্যানটিনে খেতে আসা হল শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী দরজা লাগিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে ঝামেলা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদকর্মী উপস্থিত হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সরে যান।আর এদিকে গুরুর মাংস পরিবেশন করার কথা শুনে বিভিন্ন হল থেকে ধীরে ধীরে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা হলে আসতে শুরু করে। একপর্যায়ে ক্যানটিন ম্যানেজার, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন। আলোচনার এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত আইবিএ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত রায়হানকে পেছন থেকে কেউ একজন টানা হেঁচড়া করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের হাতাহাতি হয়। এরপর দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হলের দুই পক্ষে অবস্থান নেয় হল ছাত্রলীগ। মুহুর্তেই পুরো হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্বিবিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনার সমাধান করেন।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উজ্জ্বল কুমার বলেন, আমি ক্যানটিনের এক কর্মচারীকে খাসির মাংসের কথা বললে তিনি আছে বলে জানান। এরপরেও আমি বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করি। তখনও তিনি একই কথা বলেন। কিন্তু এরপর আমাকে খাসির পরিবর্তে গরুর মাংস পরিবেশন করা হয়। যা আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার সামিল। আমি চাই, প্রশাসন এমন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক যেন পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।অভিযুক্ত ক্যানটিন ম্যানেজার বেলাল হোসেন বলেন, এর আগের দুইদিন আমরা খাসির মাংস বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু কাল খাসির মাংস রান্না করা হয়নি। হয়তো আগের দুইদিন বিক্রির কারণে আমার এক কর্মচারী ভুল করে খাসির মাংসের পরিবর্তে গরুর মাংস দিয়েছে। এজন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, এ ঘটনার পর আমরা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সেখানে ক্যানটিন ম্যানেজার আর একবার সুযোগ চেয়েছে। শিক্ষার্থীরা বেশকিছু শর্ত সাপেক্ষে তাকে সুযোগ দিয়েছে। এছাড়াও ঘটনাটি তদন্তে হলের একজন আবাসিক শিক্ষককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করবো।
হলে দেশিয় অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। তবে হলে যদি কেউ অস্ত্র মজুদ করে থাকে তাহলে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ছাত্রলীগের অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয় অবগত নয় উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, গতকাল হলের ক্যানটিনে খাবারের বিষয় নিয়ে একটা ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে বিষয়টি সমাধানের জন্য হলের ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ হল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসে। সেখানে আমাদের দুজন জুনিয়র কর্মীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। বিষয়টি জানতে পেরে আমি ও আমার সংগঠনের সভাপতি ঘটনাস্থলে গিয়ে সমাধান করেছি। আর অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়টি আমি অবগত না।