নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর দুর্গাপুর অঞ্চলের পান চাষীদের জন্য নির্দিষ্ট একটি এলাকাকে ‘পান পল্লী’ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের ‘পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প- ৩য় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়নে সুফলভোগী ও এলাকার স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে দলীয় আলোচনা সভায় দুর্গাপুরের গোপালপুর এলাকাকে ‘পান পল্লী’ ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার ফলে পান পল্লীর আওতাধীন পান চাষীরা এখন থেকে বাড়তি সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি পান চাষের জন্য পাবেন ক্ষুদ্র ঋণ।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পান পল্লী ঘোষণা করেন পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জহির রায়হান। শনিবার সকাল ১০টায় গোপালপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদের আম বাগানে আয়োজিত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এ সময় পান পল্লী ঘোষণার রূপরেখা তুলে ধরে অতিথিরা বলেন, পান চাষীদের সংগঠন না থাকার কারণে চাষীরা বিছিন্ন ভাবে পান বিক্রি করে থাকেন। ফলে দর কষাকষির ক্ষমতা হারায় পান চাষীরা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা সংখ্যায় কম থাকলেও নিজেদের মধ্যে বুঝাপড়া থাকে। আর বুঝাপড়ার কারণে কৃষক তার চাহিদা মতো দাম হাকাতে পারে না। পান যেহেতু পচনশীল তাই এটা বেশীদিন ধরে রাখাও যায় না। আবার ধরে রাখার মতো সংরক্ষনাগারের খুব অভাব। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি করে অথবা আগাম পান বিক্রি করে দেয়। ফলে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় পান চাষীরা। পানের ন্যায্য দাম না পাওয়ার আরও একটি কারণ হলো, পান চাষীরা পান উৎপাদনের জন্য যতটা না আন্তরিক তার চেয়ে বিক্রি করার ক্ষেত্রে ততটাই বেশী উদাসীন। বাজার যাচাই করে না। ব্যবসায়ীদের সাথেও পূর্বে থেকে তেমন যোগাযোগ রক্ষা করে না। আশেপাশের বাজারটাই তাদের জন্য শেষ সম্বল মনে করে। পরিমানে কম হলে মাথায় নিয়ে নিকটস্থ হাট-বাজারে বিক্রি করে।
উৎপাদিত পানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের সরাসরি বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট এলাকা ভিত্তিক কৃষক সংগঠন তৈরী করে গ্রুপ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের জন্য কৃষকের দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়ানো, সংগঠন তৈরী ও শক্তিশালীকরণ, নেতৃত্বের উন্নয়ন, গ্রুপ বা সমবায়ভিত্তিক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি অভ্যস্তকরণ, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের বৃহৎ বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ করতেই ওই এলাকাকে পান পল্লী ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান অতিথিরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানার সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রকল্প পরিচালক (পজিক) আলমগীর আল নেওয়াজ, বিআরডিবি রাজশাহী অঞ্চলের উপ পরিচালক একেএম জাকিরুল ইসলাম, উপ প্রকল্প পরিচালক সাইদুর রহমান, উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান বানেছা বেগম, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ওমর ফারুক, নওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল আলম।
পান চাষীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাবুল হোসেন, এরশাদ আলী, শকিল, আকবর হোসেন, নাজমা বেগম, মিনু বেগম ও নাসিমা বেগম প্রমুখ। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পজিক) সাইফুল ইসলাম।