November 23, 2024, 7:58 pm

News Headline :
রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব বন্ধে কঠোর হুশিয়ারি যুবদল নেতা রবি’র পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে কোথাও স্থাপনা করতে না পেরে শেষমেস ভাঙারির দোকানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ: নাছিম রাজশাহীতে আলু ও তেলের দাম বাড়তি রাজশাহীতে ‘সমন্বয়ক’ সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বললো মহানগর ছাত্রদল প্রধান উপদেষ্টার সাথে খালেদা জিয়ার মতবিনিময় দেশের সকল ক্ষমতার মালিক হবেন জনগণ: ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজশাহীতে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন দালালের ফাইলে আগে সই করেন রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের ডিডি
রাবির ২২ খাতে ১১৩ কোটি টাকার অডিট আপত্তি

রাবির ২২ খাতে ১১৩ কোটি টাকার অডিট আপত্তি

রাবি প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন বিষয়ের উপর আর্থিক অনিয়ম ও গড়মিল ধরা পড়েছে। বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয়, ব্যাংক থেকে অর্জিত সুদ সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া, ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয়-ব্যয়ের হিসাব গোপন করা, বই ক্রয়ে অনিয়মিত ব্যয়, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে বিধি বহির্ভূত খরচ, ঋণ পরিশোধের নামে অতিরিক্ত ব্যয়, বিধি বহির্ভূত আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনসহ মেডিকেল যন্ত্রাংশ ক্রয়ে অনিয়মিত ব্যয়সহ ২২টি বিষয়ের ওপর অডিট আপত্তি এসেছে। যেখানে একক ভাবে আর্থিক অনিয়ম ও অসঙ্গতি ১১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার উপরে।

দেশের সর্বোচ্চ অডিট প্রতিষ্ঠান মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) থেকে প্রকাশিত ২০২২-২৩ নিরীক্ষা বছরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও ২৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্টে এ অনিয়ম উঠে এসেছে। এককভাবে ৮টি বিষয়ের উপর অডিট গড়মিল এসেছে। বাকি ১৪টি বিষয়ে সমন্বিত অডিট অনিয়ম এসেছে।তাদের এ অনুসন্ধান নথিতে উঠে এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৩৩ কোটি ৩৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু ব্যয় করেছে ১৬৪ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। ফলে বিভিন্ন খাতে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ৩১ কোটি ১৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয় করেছে প্রশাসন। যা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় সোনালী ব্যাংক, রাবি শাখা থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৫ টাকা সুদ পায় রাবি প্রশাসন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী উক্ত অর্জিত সুদ সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত টাকা সরকারি কোষাগারে প্রদান করেনি। ফলে ২১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৫ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষার নিরীক্ষাযোগ্য রেকর্ডপত্র ও আয়-ব্যয়ের প্রাপ্ত টাকার হিসাব উপস্থাপন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিএজি নিরীক্ষা বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষা থেকে ১৭ কোটি ৮২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা আয় করে রাবি। কিন্তু উক্ত আয় এবং ব্যয়ের অডিট উপস্থাপন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সিএজি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এই হিসাবের আয়-ব্যয় এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র অডিট উপস্থাপনের জন্য চাহিদা প্রদান করা হলেও রাবি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো জবাব বা সহযোগিতা প্রদান করেনি।

নথিতে আরো উল্লেখ আছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বই ক্রয় বাবদ অনিয়মিতভাবে ২০ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮৩ টাকা ব্যয় করে বিশ্ববিদ্যালয়। এতে বলা হয়েছে, কোনোরূপ ক্রয়মূল্য ছাড়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে বিভাজন করে এই টাকা ব্যয় করে রাবি কর্তৃপক্ষ। বছরের শেষ দিন (৩০ জুন) ব্যয় দেখানোর উদ্দেশ্যেই এই ক্রয় সম্পাদন করেন তাঁরা। যা সাধারণ আর্থিক বিধিমালা (জিএফআর) ১০৩ মোতাবেক আর্থিক নিয়ম ভঙ্গ করার সামিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থবছরে কার্যাদেশের শর্ত মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পাদনে ঠিকাদার ব্যর্থ হওয়ায় ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮’ (পিপিআর) মোতাবেক চুক্তি বাতিল ও ঠিকাদারের পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বাজেয়াপ্ত না করায় ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

সিএজি কর্তৃপক্ষ আরো বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থবছরে কার্যাদেশের শর্ত মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে ঠিকাদার ব্যর্থ হওয়ায় পিপিআর ২০০৮ মোতাবেক চুক্তি বাতিল না করে ঠিকাদারকে অনিয়মিতভাবে ৬ কোটি ৫১ লাখ ৬৬ হাজার ১০০ টাকা পরিশোধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেটে ঋণ গ্রহণ বাবদ প্রাপ্তি না দেখানো হলেও ঋণ পরিশোধের নামে বাজেটে ৫৫ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে।এ প্রতিবেদনে আরো উঠে এসেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে প্রারম্ভিক স্থিতি ১০১ কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বিমক অনুদান ৪৩৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং নিজস্ব সূত্রে আয়সহ মোট ৫৬০ কোটি ৫৫ লাখ ২২ হাজার টাকা প্রাপ্তি দেখিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে উক্ত প্রাপ্তির মধ্যে ঋণ গ্রহণ বা ঋণ প্রাপ্তি খাতে আয় হয়েছে এমন কোনো অর্থ বাজেটে প্রদর্শন করেনি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু পরিশোধ খাতে থোক আকারে ঋণ পরিশোধের নামে ৫৫ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়েছে কর্তৃপক্ষ।বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রদত্ত বাজেট বিভাজনে বরাদ্দকৃত ৪৩৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার মধ্যে ঋণ পরিশোধ খাতে কোনো বরাদ্দ প্রদান করা হয়নি। ঋণ পরিশোধের নামে অর্থ ব্যয়ের সপক্ষে কোনো বিল ভাউচার বা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ প্রদান করতে পারেননি। সিএজি মনে করছে, প্রকৃত ব্যয় অপেক্ষা অধিক ব্যয় দেখিয়ে ঋণ পরিশোধের নামে ৫৫ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা অন্যত্র স্থানান্তর বা অননুমোদিত কোনো খাতে ব্যয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে পিপিআর ২০০৮ লঙ্ঘন করে আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনসহ মেডিকেল যন্ত্রাংশ ক্রয় করায় ১ কোটি ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা অনিয়মিতভাবে ব্যয় হয়েছে।

এছাড়াও প্রকল্প নিয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যায়ের সাথে সমন্বিতভাবে অডিট আপত্তি এসেছে। এগুলো হলো- বিধি বহির্ভূতভাবে শিক্ষকগণকে প্রাপ্যতা অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি ৫ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার ৯৭ টাকা, শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণকে প্রদত্ত অগ্রিম সমন্বয় করা হয়নি ১৮ কোটি ৯০ হাজার ৮ টাকা, বিডি রেন (BIREN) কর্তৃক প্রদত্ত ইন্টারনেট সেবার বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে বরাদ্দকৃত সরকারের অনুদান মঞ্জুরী হতে ইউজিসি কর্তৃক অনিয়মিতভাবে কর্তন ১ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা, সরকারি অর্থে বাস্তবায়িত প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না করায় আর্থিক ক্ষতি ১৬২ কোটি ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪০৩ টাকা, ইউজিসি’র নির্দেশনা অমান্য করে আবাসিক কোয়ার্টারে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকি প্রদান করায় ১ কোটি ৬৬ লাখ ৭ হাজার ২৮৮ টাকার আর্থিক ক্ষতি।এছাড়া শিক্ষকগণকে বিধি বহির্ভূতভাবে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত বই ভাতা প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি ২ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৭৬৯ টাকা, দোকান ও মার্কেট ভাড়া বাবদ অনাদায়ী অর্থ আদায় না করায় আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি ৮৫ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮১ টাকা, নির্ধারিত চাকুরিকাল শেষ হওয়ার পরেও সেশন বেনিফিটের নামে শিক্ষকদের বিধি বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত সময়ের চাকরির সুযোগ প্রদান করে বেতন ভাতাদি পরিশোধ করায় আর্থিক ক্ষতি ৪ কোটি ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫৭০ টাকা, উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই ক্রয়মূল্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভাজনপূর্বক কোটেশন, সীমিত দরপত্র ও নগদে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, গবেষণাগার সরঞ্জাম ও শিক্ষণ উপকরণ ক্রয়ের বাবদ অনিয়মিতভাবে ব্যয় ১৩ কোটি ২১ লাখ ১২ হাজার ১৯০ টাকা।

বিধি বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে দৈনিক মজুরী হারে পদবীভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ প্রদানে আর্থিক ক্ষতি ১৯ লাখ ৭০ হাজার ২০০ টাকা, ইউজিসি’র নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন পদে এডহকভিত্তিক/বিধি বহির্ভূতভাবে চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগে বেতন ভাতা পরিশোধ করায় আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি ১২ লাখ ২৫ হাজার ৯১০ টাকা, উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই ক্রয়মূল্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভাজনপূর্বক কোটেশন, সীমিত দরপত্র ও নগদ ক্রয়ের মাধ্যমে, ভবন ও স্থাপনা মেরামত কাজে অনিয়মিতভাবে ব্যয় ১৯ কোটি ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭২ টাকা, প্রদত্ত সম্মানি বিল থেকে কর্তনকৃত আয়কর পরিশোধকারী কর্তৃক সরকারি কোষাগারে জমা না করায় ৫ কোটি ১১ লাখ ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ/অনুষদ/কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত নথি/সান্ধ্যকালীন কোর্সের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও নিরীক্ষাযোগ্য রেকর্ডপত্র অডিটে উপস্থাপন করেনি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট সেলের উপ-পরিচালক মো. মাসুম আল রশিদ বলেন, সিএজি কর্তৃপক্ষ যে বিষয়গুলোর উপর আপত্তি জানিয়েছে সেগুলোর যৌক্তিক জবাব আমাদের কাছে আছে। আমরা খুব দ্রুতই তাদের কাছে জবাব পাঠাবো। তবে দু’একটি বিষয়ে আমাদের যে ত্রুটি বিচ্যুতি হচ্ছে না যে তা নয়। তবে ভর্তি পরীক্ষার আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অডিট আপত্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ শামসুল আরেফিন বলেন, অডিট আপত্তি একটি স্বাভাবিক বিষয়। প্রতিবছরই সিএজি কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়। তারপর আমরা জবাব দিয়ে বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করি। এটা এমন নয় যে এবারই প্রথম। এরকম প্রতি বছরেই হয়ে থাকে। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় না; বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ মন্ত্রণালয়েও অডিট আপত্তি হয়ে থাকে। আপত্তি উঠেছে বলেই যে এখানে দুর্নীতি হয়েছে এমনটা বলা যাবে না।

Please Share This Post in Your Social Media

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.