নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গতকাল সোমবার ছিল বিজ্ঞান এবং জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। ‘সি ইউনিটে’ চার শিফটে ৭২ হাজার ৪১০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী গতকাল ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। তাই ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বাড়তি মানুষ ও যানবাহনের চাপে শহরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল তীব্র যানজটের। এতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কের যানজট আশপাশের প্রধান সড়ক ও সংযোগ সড়ক পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়।
সোমবার (২৫ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে ‘সি’ ইউনিটের প্রথম শিফটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চার শিফটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়। বিজ্ঞান এবং জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত এই ইউনিটের পরীক্ষার প্রথমদিনেই ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকরা শান্তির রাজশাহী শহরে তীব্র যানজটের কবলে পড়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের ভর্তি পরীক্ষায় কোটাসহ চার হাজার ৬৪১টি আসনের বিপরীতে এক লাখ ৭৮ হাজার ২৬৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে গড়ে আরও দুজন করে অভিভাবক আছেন। এতে সব মিলিয়ে বাড়তি অন্তত চার লাখ মানুষ ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত জনবল নিয়েও রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ যানজট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
যদিও যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠুভাবে চলাচলসহ ভর্তি পরীক্ষা সুশৃক্সক্ষলভাবে সম্পন্ন করতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে সব ধরনের ভারী যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, ব্যক্তিগত ও অন্যান্য যানবাহন কাজলা ও বিনোদপুর গেট দিয়ে প্রবেশ করে মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া, কৃষি ও চারুকলা অনুষদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মন্নুজান হল-বেগম খালেদা জিয়া হল-স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন-তুঁত বাগান সংলগ্ন রাস্তাটি চলাচলের জন্য ব্যবহার, দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলার বাসগুলোর ক্ষেত্রে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক এড়িয়ে বেলপুকুর বাইপাস ও ফল গবেষণার সামনের সড়ক ব্যবহার করাসহ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাটাখালী সড়ক, বিনোদপুর, কাজলা গেইট, অক্ট্রয় মোড়, রুয়েট গেইট, তালাইমারী, ভদ্রা, শিরোইল বাসস্ট্যান্ড, গোরহাঙ্গা রেলগেইট, নিউমার্কেট, অলোকার মোড়, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, সোনাদীঘির মোড় সড়কে যানজট সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে পরীক্ষা চলাকালীন এ সড়কগুলোতে প্রায় সময়ই যানবাহন চলাচল ১৫-২০ মিনিট করে বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হয়।
যানজটের কথা মাথায় রেখে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা পরীক্ষার এক-দেড় ঘণ্টা আগেই নিজ নিজ এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওয়ানা দেয়। কিন্তু তারপরও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে তাদের বেগ পেতে হয়েছে।
মেয়ের পরীক্ষা উপলক্ষে ঢাকা থেকে রবিবার (২৪ জুলাই) এসেছেন আহসান উল্লাহ ওলি। মেয়েকে নিয়ে উপশহর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন, ‘দুপুর ১টায় মেয়ের পরীক্ষা। এক আত্মীয় বললেন, ক্যাম্পাসে যেতে ২৫-৩০ মিনিট লাগে। আমি মেয়েকে নিয়ে দেড় ঘণ্টা আগে বের হয়েছি। তবুও পৌঁছাতে পারিনি। পরীক্ষায় সময় মতো মেয়ে বসতে পারবে কিনা ভেবে দুশ্চিতায় আছি।’
দুপুর ১২টায় কাটাখালী এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওয়ানা দেন শাহরিয়ার সায়েম। বেলা সাড়ে ১২টায় বিনোদপুর পৌঁছান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের ইচ্ছে থাকলেও সেখানেই নেমে হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা হন তিনি। শুধু সায়েম কিংবা ওলি নন তাদের মত হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ এমন যানজটের কবলে পড়েন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) রফিকুল আলম জানান, পরীক্ষা চলাকালে যানজট এড়াতে ট্রাফিক বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে। তবে পরীক্ষা উপলক্ষে বাইরে থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রচুর যানবাহন ঢুকে গেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের সড়কগুলোতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এরপরও ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (প্রশাসন) কর্মকর্তা মো. আতাউল আল কোরাইশি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ১২০ জন ট্রাফিক পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে সাতশত সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি বাইরে থেকে প্রচুর যানবাহন আসায় যানজট নিয়ন্ত্রণে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফটক বেশি ব্যবহার করায় এ এলাকায় চাপ বেশি পড়েছে।’