November 29, 2024, 11:41 am

News Headline :
ফেসবুকে মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটুক্তি করায় রাজশাহীতে এক কিশোর গ্রেফতার হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস এর প্রাইভেট কারে ট্রাকের ধাক্কা পুঠিয়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহীতে মানববন্ধন রাজশাহীতে চাকুরি পুনর্বহালের দাবিতে সাবেক বিডিআর সদস্যদের মানববন্ধন প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, দলীয় ঐক্য গড়ুন: আরিফ-শাকিল কিশোরগঞ্জে একই পরিবারের ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার রাজশাহীসহ ৪ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের হামলায় আইনজীবী নিহত চট্টগ্রামে চিন্ময় সমর্থক-পুলিশ সংঘর্ষ
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে কর্মীদের পকেট ভারী ভুয়া সম্মানীতে

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে কর্মীদের পকেট ভারী ভুয়া সম্মানীতে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পরীক্ষার নিবন্ধন, নম্বরপত্র-উত্তরপত্র তৈরি, ফল প্রকাশ ও পুনঃনিরীক্ষণসহ নানা কাজে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ খরচের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বলা হচ্ছে, যারা পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কাজে সম্পৃক্ত থাকেন না, তারাও ‘বোনাস’ হিসেবে পান মূল বেতনের ৫০ শতাংশ। অতিরিক্ত এ অর্থ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পকেটে তোলেন ‘সম্মানী’ হিসেবে। যদিও ‘শিক্ষা বোর্ড অর্ডিন্যান্সের (১৯৬১) কোথাও এ ধরনের সম্মানীর উল্লেখ নেই। এ ছাড়া বিষয়টি জাতীয় সংসদের হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তেরও লঙ্ঘন।

এদিকে পরীক্ষার উত্তরপত্র ও কাগজ কেনাকাটা খাতেও এক কোটি ১২ লাখ টাকার দুর্নীতি ধরা পড়েছে। ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের অডিটে এ অনিয়ম উঠে আসে। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল এই প্রতিবেদন গত বছরের নভেম্বরে সংসদীয় কমিটিতে পাঠান। তবে এ ব্যাপারে কমিটির কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জেএসসি পরীক্ষায় নিয়ম-বহির্ভূতভাবে বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বোনাস দেওয়া হয়। জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, পূর্ব-প্রস্তুতি পরিচালনা, ফল প্রকাশ, নম্বরপত্র ও সনদপত্র, পুনঃনিরীক্ষণ সংক্রান্ত কাজের জন্য এ টাকা পরিশোধ করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার প্রতিটি সনদের জন্য ৫০ টাকা হারে সম্মানী নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু নিরীক্ষাকালে বাজেট বরাদ্দের নথি, ব্যয় বিবরণী, সম্মানী সংক্রান্ত বিল/ভাউচার ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সনদ প্রতি ৬৪ টাকা হারে মোট ৬৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই অতিরিক্ত টাকা আদায় করে শিক্ষা বোর্ডের তহবিলে জমার সুপারিশ রয়েছে অডিট প্রতিবেদনে।

২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার দুই লাখ চার হাজার ৮৩৫টি নম্বরপত্র প্রস্তুত করা হয়। নম্বরপত্র লিখন, যাচাই স্বাক্ষর ও প্রেরণকাজের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত সম্মানী (প্রতিটির জন্য) সাড়ে ১৭ টাকা। কিন্তু দেওয়া হয় ২২ টাকা করে। এতে অতিরিক্ত খরচ হয় ৯ লাখ ২১ হাজার টাকা। একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ৩৬ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। বর্তমানে পরীক্ষার ফল প্রক্রিয়া ও প্রকাশ অনলাইনে হয়ে থাকে। এ জন্য শুধু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্মানী পাওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে এ কাজের জন্য ঢালাওভাবে সম্মানীর টাকা দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। প্রত্যেকেই তাদের মূল বেতনের ৫০ শতাংশ টাকা তুলেছেন। পরীক্ষার ফল তৈরির প্রক্রিয়া ও প্রকাশের কোনো কাজ না করেই শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ভাগ পেয়েছেন ৩২ হাজার ৯১০ টাকা। ২০১৯ সালের এইচএসসি ও ২০২০ সালের এসএসসিতেও এ অনিয়ম হয়েছে।

২০১৮ সালের অক্টোবরে জেএসএসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল উত্তরপত্র ও অতিরিক্ত উত্তরপত্র এবং ওআরএম শিট সরবাহের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাস্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তিমূল্য ছিল ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী দুই মাসের মধ্যে মালামাল সরবরাহ করার কথা। কিন্তু চুক্তি ভঙ্গ করে তিন মাস পর প্রতিষ্ঠানটি মালামাল সরবরাহ করে। শর্ত ভঙ্গ করলে চুক্তিমূল্যের ১০ শতাংশ হারে জরিমানার টাকা কাটার কথা। কিন্তু জরিমানা করা হয়নি।

শিক্ষা বোর্ডের অভ্যন্তরীণ কেনাকাটাতেও অনিয়ম ও দুর্র্নীতির প্রমাণ পেয়েছে অডিট টিম। আসবাবপত্র, স্টেশনারি, বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন, আপ্যায়ন ও বিভিন্ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণের কথা বলে তৎকালীন সহকারী লাইব্রেরিয়ান আজম আলী ৭৩ হাজার টাকা তুলে নেন। একই বছর জাতীয় শোক দিবস পালনের নামে অফিস সহকারী আজমুল হোসেনের নামে তোলা হয় এক লাখ ১১ হাজার টাকা। এভাবে নানা খাত দেখিয়ে অগ্রিম ১৯ লাখ ২৭ হাজার ৯৩০ টাকা তোলা হয়।

তৎকালীন চেয়ারম্যান, সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা আর শিক্ষা বোর্ডে নেই। মেয়াদ শেষ করে চলে গেছেন যে যার মতো। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, হাইকোর্টের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশের বলেই ৫০ শতাংশ হারে বোনাসের টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অডিট আপত্তি এসেছে। সংসদীয় পিএ কমিটি আমাদের এখনো ডাকেনি। মিটিং হলে সেখানে শুনানি হবে। এরপর নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করছি।

Please Share This Post in Your Social Media

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.