সবুজ হোসেন রাজা,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: শনিবার, ১৯ আগস্ট, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিক নিয়মে চলছে স্কুলের কার্যক্রম। কোথাও ক্লাস চলছে, কোথাওবা চলছে পরীক্ষা। এদিন যে সমস্ত কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম চালু অবস্থায় পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে, মশিপুর সরিষাকোলের চাইল্ড কেয়ার কিন্ডারগার্টেন, তালগাছীর ডিজিটাল ভিশন বিদ্যানিকেতন, রেইনবো কিন্ডারগার্টেন এন্ড প্রি-ক্যাডেট হাইস্কুল, জ্ঞানালোক আইডিয়াল স্কুল, তৌফিক ইমাম মেমোরিয়াল স্কুল, কাথিনাথপুরের মডার্ণ কিন্ডারগার্টেন এন্ড স্কুল, বাড়াবিল খারুয়াজংলার মার্তৃছায়া প্রি-ক্যাডেট স্কুল এবং শাহজাদপুর পৌরসভার বাড়াবিল দক্ষিণ পাড়ার কবি নজরুল মডেল পাবলিক স্কুল।
এসময় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে শনিবারে স্কুল খুলে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
অনিবার্য কারণে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একটি আদেশে এক বছর আগে ২০২২ সালের ২২শে আগষ্ট থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুক্র ও শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন থেকেই সরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অজানা কোন কারনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধন প্রাপ্ত হয়েও কিছু সংখ্যক কিন্ডারগার্টেন স্কুল সরকারি আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শনিবারেও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সকাল এগারোটায় বাড়াবিল দক্ষিণ পাড়ার কবি নজরুল মডেল পাবলিক স্কুলের নিকটে গিয়ে দেখা যায় সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে স্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের দ্রুত বের করে দেয়া হচ্ছে। এসময় শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করলে তারাও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নানা রকম অগোছালো কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা স্বীকার করে যে প্রধান শিক্ষক তাদের শিখিয়ে দিয়েছেন, তারা যেন শনিবারে স্কুল চলেনা বলে প্রচার করে। এ স্কুলের শিক্ষক, আয়াসহ সকলেই সাংবাদিকদের দেখে পালাতে থাকেন।
এবিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হাসিবুল হক রিপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে বলতে থাকেন, “এটা আমার হোম, আমিই এখানকার মালিক। আমি এখানে যা বলবো তাই আইন। আপনারা যা পারেন করেন।” তিনি এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বলেন, “আমি এ আইন মানবোনা দেখি কি করতে পারেন?”
তিনি নিজে এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও মাস্টার্স ডিগ্রীধারী সাংবাদিকের যোগ্যতা নিয়ে অশোভন ও আপত্তিকর মন্তব্য করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তাদেরকে পুশিলের ভয়ও দেখান।
একাধিক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসিবুল হক রিপনের নামে বিভিন্ন সময় নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন। এমনকি তিনি মিথ্যা আশ্বাসে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করার পর ইচ্ছা মতো তাদের নিকট থেকে টিউশন ফি দাবি করে থাকেন। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী অভিভাবক তার সন্তানকে অন্য স্কুলে ভর্তি করতে চাইলে তাকে টিসি না দিয়ে ভয় ভীতি পর্যন্ত দেখান।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আনিসুজ্জামান বলেন, বারবার বলার পরও কবি নজরুল মডেল পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের মত করে তার স্কুল চালাচ্ছেন। আমরা তার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
শাহজাদপুর কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি জাকারিয়া ইসলাম ঠান্ডু বলেন, “সরকারি আদেশ অমান্য করা গুরুতর অন্যায়। ইতিপূর্বেই এসোসিয়েশনের মিটিংয়ে শনিবারে স্কুল বন্ধ রাখতে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও যারা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখছেন তাদের বিষয়ে শিক্ষা অফিসকে অবহিত করা হবে।”
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিধান চন্দ্র ঘোষ জানান, সরকারি আদেশ অমান্য করে শনিবারে স্কুল চালানো অপরাধের শামিল। এর কারনে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দ্বিধান্বিত হচ্ছেন। কোন প্রতিষ্ঠান এমনটি করলে তার নিবন্ধন বাতিল সহ নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।