অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতি মামলার রায় দেওয়া হয় আজ।
এতে বরখাস্ত ওসি প্রদীপের ২৮ বছর ও তার স্ত্রী চুমিকর ২৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।এছাড়া তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৭ জুলাই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দুদকের মামলার আইনজীবী চট্টগ্রাম আদালতের পিপি মাহমুদুল হক বলেন, ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালতে এই রায় দিয়েছেন।
এর আগে গত ১৭ জুলাই ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের উপস্থিতিতে মামলার যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৭ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আবদুল মজিদ।
২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২-এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় প্রদীপের সঙ্গে তার স্ত্রী চুমকিকেও আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের ২৬ জুলাই দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হয়।
গত বছরের ২৯ জুন চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত প্রদীপ কুমার দাশের অবৈধ সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেন। ২০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাটির এজাহারে উল্লিখিত সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন।
আসামি প্রদীপ কারাগারে থাকলেও তার স্ত্রী চুমকি পলাতক ছিলেন। চলতি বছরের ২৩ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন চুমকি। আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তাদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে চার্জশিটে। ঘুষ ও দুর্নীতির টাকায় অর্জিত সব সম্পদ ওসি প্রদীপ তার স্ত্রীর নামে রেখেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
জানা গেছে, দুদকে জমা দেওয়া সম্পদের বিবরণীতে তারা ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তদন্তে দেখা গেছে, তারা ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইন-২০০৪ এর ২৬ (২), ২৭ (১) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এই হত্যা মামলায় প্রদীপকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।