নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী সিটি করপোরেশনের গ্রীণ প্লাজায় চলছে বস্ত ও কুঠির শিল্প মেলা-২৩। গত ১৮ নভেম্বর এ মেলা উদ্বোধন করা হয়েছে। চলবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। চলমান এ বস্ত ও কুঠির শিল্প মেলা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন রাজশাহীর উদ্যোক্তরা।
অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর বেশিরভাগ উদ্যোক্তাদের বাদ দিয়ে বাইরের উদ্যোক্তাদের নিয়ে এবার মেলা করা হচ্ছে। মেলার নামে ইউমেনএন্টারপ্রিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব) এর সভাপতি অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন। বস্ত্র ও কুঠির শিল্প মেলার নামে এবার ওয়েবের সভাপতি টাকার খেলা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্টল বরাদ্দের নামে লাখ লাখ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও ওয়েবের সভাপতির বিরুদ্ধে রয়েছে।
ইউমেনএন্টারপ্রিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব) এর উদ্যোগে এবারের মেলা করা হচ্ছে। স্পন্সার হিসাবে এবার মেলায় যোগ হয়েছে ৮টি প্রতিষ্ঠান। বস্ত ও কুঠির শিল্প মেলায় ৫২টি বিভিন্ন ধরনের স্টল বসানো হয়েছে। এসব স্টল মূলত বাইরের উদ্যোক্তাদের নিয়েই সাজানো হয়েছে। ইচ্ছে থাকার পরও মেলায় রাজশাহীর অনেক উদ্যোক্তাই স্টল দিতে পারেননি। এতে রাজশাহীর উদ্যোক্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ওয়েব ভুক্ত উদ্যোক্তা সংখ্যা প্রায় দেড়শ’র মত। তারমধ্যে রাজশাহীতেই রয়েছে প্রায় শতাধিক উদ্যোক্তা। কিন্তু এবার মেলায় রাজশাহী থেকে মাত্র ১৭জন উদ্যোক্তা স্টল দিতে পেরেছেন। আর বাকি মেলায় বাকি যে স্টল রয়েছে তাদের বেশিরভাগই বাইরের উদ্যোক্তা। বাইরে থেকে এসে মেলার স্টল বরাদ্দ পেলেও রাজশাহীর উদ্যোক্তারা মেলায় স্টল দেয়ার সুযোগ পাননি।
এবার বস্ত ও কুঠির শিল্প মেলায় স্টল ভাড়া বলাই যায় আকাশ ছোঁয়া। ছোট ছোট উদ্যোক্তরা ইচ্ছে করলেও এ মেলায় স্টল নিতে পারবেন না। কারণ এবার মেলায় ছোট একটি স্টল দিতে গেলে একজন উদ্যোক্তারাকে সর্বনিম্ন গুনতে হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ স্টলের ভাড়া রয়েছে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। ছোট স্টলগুলোর ভাড়া ধারা হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর বড়গুলো প্রকারভেদে তিন লাখ পর্যন্ত।
রাজশাহীর উদ্যোক্তারাদের অভিযোগ এবার মেলা হচ্ছে না। হচ্ছে মেলার নামে টাকার খেলা। মেলার উদ্যোগকারী নিজের ইচ্ছেমত টাকা নিয়ে স্টল বরাদ্দ দিয়েছেন। কারো কারো কাছ থেকে অগ্রিম অতিরিক্ত টাকাও নেয়া হয়েছে। কিন্তু রাজশাহীর উদ্যোক্তারা টাকা দিয়েও স্টল পাননি। ওয়েবের সভাপতি মেলার স্টল বরাদ্দের নামে এবার রমরমা ব্যবসা করছেন। মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেলায় স্টল দেয়া উদ্যোক্তারা।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন মেলায় লোক সমাগম হচ্ছে অনেক। লোকজন পণ্য দেখছে দাম বেশি হওয়ার কারণে না কিনে চলে যাচ্ছেন। দেখা শোনার মধ্যেই থাকছে ক্রেতারা। কিন্তু তারা পণ্য কিনছে না। মেলায় স্টল দেয়া উদ্যোক্তারা নাম প্রকাশ না করার সর্তে জানান, অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কারণে তাদের উচ্চ মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ এক মাসের মেলা। স্টল ভাড়া অতিরিক্ত। তার উপর পণ্যের দাম এবার বেশি। স্টল ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে তাদেরও অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে একবার যে মেলায় পণ্য কিনতে আসতে সে আর দ্বিতীয়বার আসছেন না। এছাড়াও বেশ কিছু উদ্যোক্তাদের বক্তব্য শুধু মাত্র স্টল ভাড়ার তাদের এই মেলায় লোকসান গুনতে হবে।
মেলায় পণ্য কিনতে আসা শামিমা ইয়াসমিন এবার মেলায় পণ্যের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, মেলায় মূলত সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পাওয়ার জন্য আমরা আসি। কিন্তু এবার মেলায় সব পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। মিথিলা নামে অপর ক্রেতা বলেন, এবার মেলায় প্রবেশ করে পণ্যের দাম শুনে আর ভেতরে গিয়ে পণ্য দেখার সাহস পাইনি। জুলফিকাল আলী নামে কলেজ ছাত্র জানান, মেলায় কোর্ট নেয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু যে দাম চায় বিক্রেতারা তাতে বাইরে থেকে অনেক কম দামে এধারনের কোর্ট পাওয়া যাবে। তাছাড়া এবার মেলায় আমদানি করা পণ্যের মানও ভাল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে ইউমেনএন্টারপ্রিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব) এর সভাপতি, আনজুমান আরা লিপি মেলার স্টল ভাড়া বেশি স্বীকার করে বলেন, এবার মেলায় স্টল ভাড়া একটু বেশি। যার কারণে ছোট উদ্যোক্তারা স্টল বরাদ্দ নিতে পারেননি। রাজশাহীতে মেলা অথচ রাজশাহীর উদ্যোক্তারা স্টল বরাদ্দ পায়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা এখানে স্টল নেয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন তাদের মধ্যে বেশি ভাড়া দিয়ে অনেকেই স্টল বরাদ্দ নেয়ার ক্ষমতা ছিল না। তাই পায়নি। এছাড়াও স্টল ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে রাজশাহীর অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেনি। স্টল ভাড়া বেশি কেনো জানতে চাইলে তিনি জানান, যারা স্টল নিয়েছেন তাদের সাথে আলোচনা করেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আর মেলার প্রচার-প্রচারণা, সাংবাদিকদের আপ্যায়ন, জায়গা ভাড়া, সব খচর মিলিয়েই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।