November 29, 2024, 10:52 pm

News Headline :
ঘুষের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা!

ঘুষের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে এক সদস্য প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। যদিও পরে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে স্বপদে ফেরানো হয়। সেই কর্মকর্তাকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রার্থীরা।

আব্দুল হান্নান বর্তমানে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানা নির্বাচন কর্মকর্তা। গত ১৩ মার্চ তিনি এখানে যোগ দেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

এর আগে, গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীকে জিতিয়ে দিতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। সে সময় অর্থ লেনদেন নিয়ে এক প্রার্থীর সঙ্গে আলোচনার একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আব্দুল হান্নানের কণ্ঠের সঙ্গে মিলে যাওয়া এক ব্যক্তিকে ওই প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। তবে দেড় বছরের মধ্যেই অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি পেয়ে আবার তিনি নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘বিতর্কিত কেউ যেন নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে না থাকেন—সেই নির্দেশনা ইসিই দিয়েছেন। তারপরও এ আসনে এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়েছে। একজন নির্বাচন কর্মকর্তা যেখানে ইউপি নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বরখাস্ত হন, সেখানে তাঁকে সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব দেয় কীভাবে?’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাজশাহী মহানগরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ উঠেছিল, সেহেতু তাঁকে এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে না রাখাই উচিত ছিল। আশা করি নির্বাচন কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।’

একই কথা বলেছেন জাসদ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী। তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো আমি আগে জানতাম না। কে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সেটিও জানতাম না। এখন জানলাম। অভিযোগটি তো খারাপ, যদিও অভিযোগ থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন বলে শুনলাম। তারপরও নির্বাচন কমিশনের উচিত বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আগে বালারহাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেছিলেন নির্বাচনে কম ভোট পেলেও ফল ঘোষণার সময় তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। এ জন্য নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে ওই ইউপি সদস্যের সাড়ে চার লাখ টাকার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী তিন লাখ টাকা তাঁকে দেওয়া হয় বলে দাবি রফিকুল ইসলামের।

অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করা হয়েছিল। অর্থ লেনদেনের চুক্তির অডিও ফাঁস হলেও তদন্তে তেমন কিছু প্রমাণিত হয়নি। তাই আব্দুল হান্নানের বরখাস্তের আদেশ তুলে নিয়ে অন্য থানায় বদলি করা হয়। তিনি এখন রাজশাহীতে।

নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘অভিযোগ হলেই তো ব্যক্তি অভিযুক্ত না। রংপুরের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে দুবার তদন্ত করেছে। প্রমাণিত হয়নি। তাই গত জানুয়ারিতে অব্যাহতি দিয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে বলেই নির্বাচন কমিশন আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। দায়িত্ব তো আমি চেয়ে নিইনি। এখানে আমার কোনো প্রার্থীর সঙ্গে দেখা হয়নি, কারও সঙ্গে কথা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে এখন এসব কথা আসবে কেন? চাকরিজীবনে আমার কোথাও কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব দিয়েছে, যদি না দেয় আমি দায়িত্ব পালন করব না।’

আব্দুল হান্নানের বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে রংপুরের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শাস্তিও দেয়নি কমিশন। ফলে আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনে বাধা নেই।’

উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সদস্য ও বিতর্কিতদের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত রোববার নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত পরিপত্রে সংশ্লিষ্টদের এসব বিষয় জানানো হয়।

রাজশাহী-২ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা, দলের কর্মী আবু রায়হান মাসুদ ও রেজাউন নবী আল মামুন।

এ ছাড়া রাজশাহী-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ফজলে হোসেন বাদশা (বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি), আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী (জাসদ), সাইফুল ইসলাম স্বপন (জাতীয় পার্টি), কামরুল হাসান (বিএনএম), মো. শামীম (তৃণমূল বিএনপি), ইয়াসির আলিফ বিন হাবিব (মুক্তিজোট), মো. মনিরুজ্জামান (গণফ্রন্ট) ও মারুফ শাহরিয়ার (বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টি)।

Please Share This Post in Your Social Media

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.