নিজস্ব প্রতিবেদক: অসময়ে গুড়িগুড়ি টানা দিন রাতের বৃষ্টিতে রাজশাহীর তানোরে আলু চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। রোপনকৃত প্রায় জমিতে প্রচুর পানি জমে রয়েছে। আর জমে থাকা পানি বের করতে কোমর বেধে নেমে পড়েছেন চাষীরা। কিন্তু পানি বের করার কোন উপায় নেই। সব জমিতেই পর্যাপ্ত পানি। আর এসব পানি দ্রুত সময়ের মধ্যে বের না হলে পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে করে আলু চাষীদের কপালে পড়েছে চরম ভাজ, সেই সাথে জমি থেকে পানি নামাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে পড়ছেন।
সরনজাই ইউপির শুকদেবপুর গ্রামের কৃষক জামিল, সেলিম, রেজাউলসহ চাষীরা জমি থেকে পানি বের করার জন্য সকাল থেকে থালা, গামলা দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করছেন।
চাষী জামিল জানান, ৫ বিঘা জমিতে আলু রোপন করে গত মঙ্গল ও বুধবারে সেচ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার দিন রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারনে জমিতে প্রচুর পরিমানে পানি জমে গেছে। বের করার কোন ব্যবস্থা নেই। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যে পানি বের না হলে পচে নষ্ট হয়ে যাবে।
রেজাউল নামের আরেক কৃষক বলেন তিন বিঘা জমিতে আলু লাগিয়ে প্রথম সেচ দেয়ার পর এমন মড়কে পড়েছি। সেলিম নামের আরেক কৃষক বলেন, আমার ৭ বিঘা ভায়ের ১২ বিঘা আলুর জমিতে থইথই করছে পানি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তবে লীজ নিয়ে যারা রোপন করেছেন তাদের খরচ আরো বেশি হবে।
পাঁচন্দর ইউপির কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, ৪৫ বিঘা জমিতে সেচ দিয়েছিলাম। জমিতে প্রচুর পানি বের করার কোন উপায় নেই। হাবিবুরের ৩০ বিঘা, সেহেরুলের ১০ বিঘা, সারোয়ারেরে ৪০ বিঘাসহ প্রায় প্রতিটি কৃষকের আলুর একই অবস্থা। তিনি আরো বলেন, যে সব চাষীরা সেচ নিয়েছিল তাদের সমস্যা। এমনকি দ্রুত জমি থেকে পানি বের না হলে পচে যাবে এবং ফলনও কম হবে। বিঘায় এখন পর্যন্ত নিম্মে ৪০ হাজার টাকা থেকে ঊর্ধ্বে ৪৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
কৃষকরা জানান, আলু রোপনে এবার সব চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। কারন জমি লীজ, সার কীটনাশকের বাড়তি দামের কারনে এতবেশী খরচ গুনতে হয়েছে। গত বুধবার সারাদিন সূর্যের আলোর দেখা নেই। রাত থেকে ও বৃহস্পতিবার দিন রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির কারনে জমির প্রচুর পরিমানে পানি জমে আছে। শুক্রবার সকালের দিকে মাঝে মাঝে সূর্যের আলো দেখা গেলেও দুপুরের পর থেকে মেঘলা আকাশ। প্রচন্ড খরতাপ হলে দ্রুত পানি সুখিয়ে যাবে, আর এরকম আবহাওয়া থাকলে আলু পচে নষ্ট হবে যেমন, ঠিক তেমনিভাবে ফলনের চরম বিপর্যয় ঘটবে। তবে আলু সর্বনাশ হলেও সরিষার জন্য উপকার হয়েছে।
মাহাম নামের এক কৃষক তার জমির ছবি ফেসবুকে দিয়ে বলেন কারো সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস। তিনি আরো বলেন, আট বিঘা জমিতে আলু রোপন করার পর চারদিনের মাথায় সেচ দেয়া হয়। সেচ দেয়ার পরেই বৃষ্টিতে সর্বনাশ হয়ে গেছে। একবার জমিতে গিয়ে এমন অবস্থা দেখে আর যেতে ইচ্ছে হয়নি। আট বিঘায় প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত মৌসুমের লাভ দেখে আলু রোপন করে যেন পথে বসতে হল।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন,এবারে আলু রোপনের লক্ষমাত্রা ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। এপর্যন্ত রোপন হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। যে সব জমিতে সেচ দেয়া হয়েছিল ওই সব আলুর জমি ক্ষতি হবে। জমি থেকে দ্রুত পানি বের করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। পানি বের করতে না পরলে লোকসানের মুখে পড়বে চাষীরা।
আর যারা সেচ নেয়নি তাদের তেমন ক্ষতি হবে না। আবার সরিষাতে উপকার হবে।