নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতক স্বামী রুবেল হোসেনকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৫। রুবেল রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত ওসমান আলীর ছেলে।
পেশায় তিনি একজন রডমিস্ত্রি।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে স্ত্রী ঝর্ণা খাতুনকে (২৪) শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যার পর গা ঢাকা দিয়েছিলেন রুবেল।
পরে রাত ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর কাটাখালী থানার মাসকাটাদীঘি এলাকায় এক বন্ধুর বাড়ি থেকে র্যাব-৫ এর রাজশাহীর একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে র্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস।
তিনি বলেন, ঝর্ণা খাতুন এক সন্তানের মা ছিলেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ও পরহেজগার প্রকৃতির নারী ছিলেন।
এলাকার লোকজন তাকে ভালো বলেই জানেন। এরপরও রুবেল হোসেন তার স্ত্রীর নামে পরকীয়া প্রেমে জড়ানোর অভিযোগ তোলেন। এ নিয়ে প্রায়ই তার স্ত্রী ঝর্ণাকে মারধর করতেন। যদিও এ ব্যাপারে রুবেলের কাছে কোনো ধরনের প্রমাণ ছিল না।
সম্প্রতি রুবেল তার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। পরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চান। বলেন, আর কখনও স্ত্রীকে মারধর করবেন না। তাকে যেন শেষ একটিবার সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি ভালো হয়ে যাবেন। তার এমন প্রতিশ্রুতিতে ঝর্ণা আবার স্বামীর বাড়ি আসেন। কিন্তু রুবেল তার স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা একসঙ্গে শুয়ে পড়েন। ভোরে রুবেল উঠে তার মা ও বোনের ঘর বাইরে থেকে আটকে দেন। এরপর শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ঝর্ণাকে নৃশংসভাবে খুন করে পালিয়ে যান।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক জানান, রুবেল একজন মাদকাসক্ত যুবক। স্থানীয় দুটি বেসরকারি সংস্থায় তার অনেক টাকা ঋণ আছে। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে তিনি মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। স্ত্রীকে হত্যার পর রুবেল প্রতিবেশী দেশে (ভারত) পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
আর এজন্যই রাজশাহী শহরে এসে তার এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করেন। তবে হত্যার ঘটনার পর থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৫) ছায়াতদন্ত শুরু করে। তারা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রুবেলের অবস্থান নিশ্চিত হন এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রুবেলকে বাগমারা থানায় হস্তান্তর করা হবে। থানায় এরই মধ্যে তার নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঝর্ণাকে হত্যার অভিযোগে সোমবারই তার ভাই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে রুবেলকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় রুবেল ছাড়াও তার মা ও বোনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে রুবেল র্যাবের কাছে দাবি করেছেন, মা ও বোন হত্যাকাণ্ডে যেন বাধা দিতে না পারেন তার জন্য তিনি তাদের ঘরের দরজার ছিটকিনি বাইরে থেকে আটকে রেখেছিলেন। তিনি একাই খুন করেছেন।
এদিকে রাজশাহীর বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা সবাই পলাতক। কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে রুবেল র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে বলে শুনেছেন। থানায় হস্তান্তর করা হলে তার নামে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।