নিজস্ব প্রতিনিধি: আজ ১৭ মার্চ, মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মদিন। দিবসটি ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় উদযাপিত হয়ে আসছে। দিনটি বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিম) বনাঢ্য আয়োজনে পালন করেছেন। সারা দেশের ন্যায় বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম প্রশাসন সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর দিনটি উপলক্ষে দোয়া মাহফিল, বঙ্গবন্ধুর উপর বিশদভাবে আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি, রেলওয়ে যাত্রীদের ফুলেল শুভেচছা, ট্রেনের যাত্রা করা ছোট্ট সোনামণিদের মাঝে চকোলেট ও পেন্সিল বক্স বিতরণ করা হয়েছে।
রোববার (১৭ মার্চ) বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করেন।
জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার। সভা সঞ্চালনা করেন এসডাব্লু (অতিরিক্ত)ডিএসই সদর ইসতিয়াক জহুর তামিম।
এছাড়াও পশ্চিমাঞ্চল রেলের আরো উপস্থিত ছিলেন চীফ ইঞ্জিনিয়ার আসাদুল হক, ফঞ্চাও এফএন্ডসিএও গোরঙ্গ চন্দ্র দেবনাথ, অতিরিক্ত জিএম আহমেদ মাসুম, সিওপিএস আহছানউল্লা ভূইয়া, সিএমই কুদরত ই খুদা, সিসিএম সুজিত কুমার বিশ্বাস, সিএসটি মিজানুর রহমান, সিইই সফিকুর রহমান, সিওএস রাশেদ ইবনে আকবর, সিও রেজাউল করিম, ডিএমও মারুফ আহম্মেদ প্রমূখ। উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে শ্রমিকলীগ ওপেন লাইন শাখার সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আক্তার আলীসহ আরবিআর শাখার সভাপতি আইনুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক দেব্রত সিনহা দেবু। এজিএম মেহেদী হাসান বঙ্গবন্ধুকে উৎস্বর্গ করে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
প্রধান অতিথিসহ উপস্থিত বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ রাত ৮টায় তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ বংশের আদরের এই ‘খোকা’ই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বাঙালির ‘মুজিব ভাই’, ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জাতির পিতা’। শেখ লুৎফর রহমান এবং সায়েরা খাতুন দম্পতির তৃতীয় সন্তান ‘খোকা’ পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণে হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু।
কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতি সচেতন ছিলেন বঙ্গবন্ধু। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মতো রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। এসব নেতার সাহচার্যে তিনি নিজেকে ছাত্র-যুবনেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মওলানা আযাদ কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে অগ্রসর হন বঙ্গবন্ধু। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ গঠন হলে যুগ্ম সম্পাদক পদ পান বঙ্গবন্ধু।
পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনে স্বাধীনতার অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে। ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবন সোচ্চার এই অবিসংবাদিত নেতাকে রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।
তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরবর্তী সময়ে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ করেন।
তাঁর সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতির ওপর নানা নির্যাতন শুরু করে। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্ত পর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন।
এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রেলওয়ে শ্রমিকলীগ, অফিসাস ক্লাব, রেলওয়ে নাট্যগোষ্ঠী, জিআরপি থানাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।