নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে বিক্রিত এবং জনপ্রিয় সুগন্ধযুক্ত পানীয় হিসেবে কোকাকোলা, পেপসি, সেভেন আপ, ডিউ, মিরিন্ডা অন্যতম। কিন্তু এই জনপ্রিয় পানীয় এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজশাহীর দোকানীদের কাছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বছরের পর বছর পরে থাকলেও তা উত্তোলন করছেন না ডিস্ট্রিবিউটর কানেক্ট। আর এই পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়ছেন বিক্রেতা। এছাড়াও ডিস্ট্রিবিউটরকে এসকল পণ্য উত্তোলনের কথা বললে হয়রানি করা হচ্ছে পুলিশ দিয়ে, দেখানো হচ্ছে মামলার ভয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী নগরীর কাজলা মোড়ে অবস্থিত মা ভ্যারাইটি স্টোরে কানেক্ট ডিস্ট্রিবিউটর এর সেভেন আপ, ডিউ, মিড়িন্ডা ও পেপসি প্রায় ৬ মাস আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তা এই ডিস্ট্রিবিউটর কোনভাবেই উত্তোলন বা পরিবর্তন না করে দোকান মালিককে প্রশাসন দিয়ে ভয় দেখানো সহ মামলা করবে বলেও হুসিয়ারি দেন কানেক্ট ডিস্ট্রিবিউটর এর ম্যানেজার মাসুম। পণ্য ড্যামেজের ঘটনায় ডিস্ট্রিবিউটর ও এস আর দায়ি বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের যোগসাজশে কম ডেটের এই কমল পানীয় না জানিয়ে দোকানীদের কাছে বিক্রয় করে থাকে তারা।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এ ধরনের ভোগান্তির স্বীকার শুধু মা ভ্যারাইটি স্টোর-ই নয়। এই তালিকায় রয়েছেন কাজলা মোড়ের বার্লিন স্টোর, ইয়াসিন স্টোর, ধরমপুর এলাকার সাগর স্টোর, সৈনিক স্টোর সহ তালাইমারী, জাহাজঘাট, আমজাদের মোড়, চাররাস্তার মোড়, সুরাফানের মোড়, মিজানের মোড়, সাতবাড়িয়া, বিনোদপুর বাজার, ফুলতলা, রেলগেইট, ভদ্রা, সাহেব বাজার সহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত এরকম একাধিক আরও অনেক দোকানদারদের তারা বিভিন্নভাবে জিম্মি করে রাখে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক দোকানদার বলেন, আমরা বিভিন্ন কোম্পানির কোমল পানীয় বিক্রি করি। কিন্তু সমস্যা শুধু রাজশাহীর কানেক্ট ডিস্ট্রিবিউটর। তারা প্রয়োজনের তুলনায় অধিক মালামাল চাপিয়ে দেয়, আবার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে তা উত্তোলন করতে বা পরিবর্তন করতে গড়িমসি করে। আর দোকানদার মেয়াদ উত্তীর্ণ পানীয় উত্তোলনের চাপ দিলে সে দোকানে যাওয়া বন্ধ করে দেয় এস আর। এখানেই শেষ না তারা বিভিন্নভাবে আমাদের হয়রানি ও পুলিশের ভয় দেখায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য রাজশাহীর সব জায়গাতেই বিক্রি হচ্ছে অনায়াসে। তবে শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামে এসব খাদ্যের বিক্রি বেশি। আর এসব খাদ্য কিনে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন ক্রেতারা। তাদের ভুগতে হচ্ছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যে গুণগত মানের পরিবর্তন ঘটতে পারে। বদলে যেতে পারে রং, স্বাদ ও গন্ধ। কারণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে খাদ্যের প্রিজারভেটিভ কাজ করে না। তখন খাদ্যের মধ্যে বিভিন্ন জীবাণু জন্ম নেয়। জীবাণুগুলো বংশ বিস্তারের সময় খাদ্যে এক ধরনের টক্সিন উৎপন্ন হয়, যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর ফলে পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। ডায়রিয়া, আমাশয়ের মতো রোগ হতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে রাজশাহীতে বোতলে নতুন করে স্টিকার লাগিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কোমল পানীয় বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে। ভয়ংকর এ কাজ করেছেন রাজশাহী নগরের খড়খড়ি এলাকার ডিলার আনোয়ারুল ইসলাম আনার। বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই পানীয় নগরের বাইরে জেলার পবা, দুর্গাপুর, মোহনপুর. তানোর, গোদাগাড়ী ও বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বাজারজাত করছেন তিনি। এর মাধ্যমে গত কয়েক বছরে আনোয়ার চা বিক্রেতা থেকে কোটিপতি বনে গেছেন।
কানেক্ট ডিস্ট্রিবিউটর ম্যানেজার মাসুম বলেন, আমাদের কিছু প্রশাসনিক কাঠামো গত সমস্যা থাকায় কিছুদিন হলো মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য মার্কেট থেকে তোলা হয়নি। এখন আমরা তা ফেরত নিচ্ছি। সেভেন আপ বড় কোম্পানি। এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। সাময়িক সমস্যা হয়েছিলো তা আমরা রিকোভার করে নিয়েছি।
এরিয়া ইনচার্জ সাইফুল বলেন, আমরা বছরে একবার মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য উত্তোলন করি। এটাই আমাদের কোম্পানির নিয়ম। আর মামলা বা হুমকির বিষয়টি সঠিক নয়। আমি এবিষয়ে এর বেশি কিছু বলতে পারিনা, আমার হায়ার অথরিটি আছে।