নাহিদ ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ ও জেনারেটর স্থাপনের জন্য ২০২০ সালের এপ্রিলে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। ২ কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৬৫৭ টাকা ব্যয়ে ছয় মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চার বছরেও সেই কাজ শেষ করতে পারেনি। তবে কাজের বিল তুলে নেওয়া হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময়েও কাজ শেষ না করায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বলেন, গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে ঠিকাদারের চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী সাবস্টেশন স্থাপন শেষে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও গণপূর্ত বিভাগ এটি হস্তান্তর করেনি। বাধ্য হয়ে তিনি এক সপ্তাহ আগে আলটিমেটাম দিয়েছেন-এক সপ্তাহের মধ্যে সাবস্টেশন হস্তান্তর না করা হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করবেন। এরপর সাবস্টেশনের কেবল বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য একটি ১০০০ কেভিএ সাবস্টেশনসহ বিল্ডিং ও ৫০০ কেভিএ জেনারেটর স্থাপনের কাজটি পেয়েছে রংপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈয়দ সাজ্জাদ আলী।
এই প্রকল্পের প্রাক্কলন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ দেশের একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি শিক্ষা ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিতে সুষ্ঠুভাবে বিভিন্ন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বহু রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়। ফলে সার্বক্ষণিক সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য একটি ১০০০ কেভিএ সাবস্টেশনসহ বিল্ডিং ও ৫০০ কেভিএ জেনারেটর স্থাপন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
২০২০ সালের ২২ এপ্রিল প্রকল্পের কার্যাদেশে সই করেন রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ফেরদৌস শাহনেওয়াজ কান্তা। কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর জায়গায় পরে যাঁরা দায়িত্বে এসেছেন, তাঁরা সেটি বলতে পারবেন।
রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, এটি তাঁদের চলমান কাজ। কাজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কাজ। অনেক বিষয় আছে। এভাবে ফোনে বলে বোঝানো যাবে না। সামনা-সামনি বসে বুঝিয়ে বলতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ছয় মাসের এই কাজ গত চার বছরেও শেষ করা হয়নি। ইতিমধ্যে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদারকে কাজের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু ভবন নির্মাণের পর অন্যান্য কাজ শেষ না করেই ফেলে রাখা হয়েছিল।
সম্প্রতি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিফট নিয়ে জালিয়াতি ধরা পড়লে নড়েচড়ে বসে গণপূর্ত বিভাগ। ঠিকাদারকে তারা কেবল বসানোর তাগিদ দেয়। গত কয়েক দিন থেকে তড়িঘড়ি করে ঠিকাদার কেবল বসানো শুরু করেছেন।
এদিকে, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের আলটিমেটাম দেয়ার পর গত সোমবার থেকে ঠিকাদারের কর্মচারীরা কেবল লিংক করার জন্য ড্রেন খনন করছেন। বুধবারও সেই কাজ চলেছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, নিম্নমানের কেবল দিয়ে দায়সারা করে কাজ শেষ করা হচ্ছে।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি হিসেবে রাজশাহীতে কাজের তদারকি করছেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (অব্যাহতি নেওয়া) মাইনুল চৌধুরী শান্ত। কাজের দীর্ঘসূত্রতার ব্যাপারে তিনি বলেন, করোনার সময়ে গণপূর্তের তহবিল না থাকার কারণে কাজটি করতে দেরি হয়েছে। তা ছাড়া লাইসেন্স বোর্ড ও নেসকোর অনুমতি পেতে দেরি হয়েছে।
কাজের বিল পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, কাজও অনেক দিন আগে শেষ হয়েছে। এখন যে কাজ চলছে, ওটা অন্য কাজ। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই হস্তান্তর হয়ে যাবে।
এই কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত-২ এর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আয়াতুল্লাহ বলেন, নেসকোর অনুমতি পেতে দেরি হয়েছে ছয় মাস। আরও একটি কাজে আট মাস দেরি হয়েছে।
তাই বলে ছয় মাসের কাজ শেষ হতে চার বছর কীভাবে লাগে এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। কাজের বিল পরিশোধ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন আগের কথা। তাঁর মনে নেই।