নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রাচীনতম রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দির স্বজনদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের স্বস্তি দিতে দীর্ঘদিনের পুরাতন জরাজীর্ণ অপেক্ষাগারটি প্রয়োজনীয় সংস্কার, মেরামত ও পুনঃনির্মাণ আধুনিকীকরণ করা হবে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগীয় কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেন এ উদ্যোগ নেন।
জানা গেছে, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার ১৮৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পূর্ব বাংলার ২টি প্রেসিডেন্সি জেলের মধ্যে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার অন্যতম। যে সময় কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়, সে সময় খুবই স্বল্প পরিসরে দর্শনার্থীদের বসার স্থান নির্ধারিত ছিল। সেটিও এখন পুরাতন, জরাজীর্ণ এবং অবস্থানের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় পানি পড়ে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা বিরাজ করছে।
কারা সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান কারা উপ-মহাপরিদর্শক, রাজশাহী বিভাগে যোগদানের পরপরই সমগ্র কারা এলাকা (ভেতর ও বাহির) প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ পরিদর্শনকালে (ভিতর ও বাহির) দর্শনার্থীদের বসার স্থান, ওয়াশরুম, ফ্যানসহ ইত্যাদির নাজুক অবস্থা দৃষ্টিগোচরে আসলে নিজেই স্বপ্রণোদিত হয়ে স্থানীয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে আধুনিক ও উন্নতমানের দর্শনার্থী অপেক্ষাগার হিসেবে সেড নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
স্থানীয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগপূর্বক প্রাক্কলন সংগ্রহের জন্য রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক নির্দেশ প্রদান করাসহ সেবাপ্রত্যাশী জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় গণপূর্তের নিকট হতে প্রাক্কলন সংগ্রহপূর্বক বিভাগীয় দপ্তরের মাধ্যমে প্রশাসনিক অনুমোদনসহ অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারা অধিদপ্তরে প্রেরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। পাশাপাশি নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত-১, রাজশাহীকে টেলিফোনে অনুরোধ করেন তিনি।
এরই প্রেক্ষিতে ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয় সংক্রান্ত প্রাক্কলন ইতোমধ্যে কারা অধিদপ্তরের প্রেরণ করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের ব্যবহারের জন্য অপেক্ষাগার হিসেবে ‘দর্শনার্থী সেড’ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানিয়েছে কারা সূত্রটি।
কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি যশোর, চট্টগ্রাম ও সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপারের দায়িত্ব পালনকালে ইতঃপূর্বে স্থানীয় গণপূর্তের মাধ্যমে এপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করে বিদ্যমান দর্শনার্থী অপেক্ষাগারের প্রয়োজনীয় মেরামত, সংস্কার ও নির্মাণ করা হয় (নারী-পুরুষের জন্য পৃথক পৃথক ওয়াশরুম ও ব্রেস্টফিডিং কর্ণারসহ)। রাজশাহীতে তার এমন উদ্যোগের ফলে দর্শনার্থীদের মাঝে স্বস্তি ফিরবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কারা-উপমহাপরিদর্শক মো. কামাল হোসেন বলেন, বর্তমানে সারা বাংলাদেশে তীব্র দাবদাহ বিরাজ করছে। রাজশাহীর আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে বেশি চরমভাবাপন্ন হওয়ায় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ইতোমধ্যে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কারা বন্দির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সাধারণ দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। রাজশাহী বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত হওয়ায় আবহাওয়া অত্যন্ত চরমভাবাপন্ন।
তিনি বলেন, উষ্ণতম জেলা নাটোরের লালপুর, রাজশাহী, নওগাঁ ও অন্যান্য জেলা হতে কারাবন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তাদের আত্মীয়-স্বজনরা দূরদূরান্ত থেকে রাজশাহীতে আগমন করেন।
কারা বন্দিদের আত্মীয়-স্বজন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের বিদ্যমান জরাজীর্ণ দর্শনার্থী অপেক্ষাগারটিতে বাধ্য হয়ে অবস্থান করেন। অপেক্ষাগার পুনঃ নির্মাণ করা না হলে সাধারণ দর্শনার্থীদের তীব্র তাপদাহ জনিত কারণে হিট স্ট্রোক তথা উচ্চ রক্ত চাপে প্রাণহানিরও সম্ভাবনা থেকে যায়।