নিজস্ব প্রতিবেদক(নাজমুল): রাজশাহী মহানগরীতে আটক বাণিজ্য ও দূর্নীতির মহানায়ক সহ মাদক সেবনকারী পবা থানার পুলিশের এসআই সোহাগ। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে চাকুরীতে যোগদান করেন সোহাগ। তিনি সর্বপ্রথম রাজশাহী তে আসার পরে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার (মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ি) তে ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন।
মির্জাপুর ফাঁড়ি তে যোগদানের পর থেকে শুরু হয় তাই দূর্নীতি। ডাসমারী ও মিজানের মোড় নদীর পাশে থাকায় বিভিন্ন মাদকের বড় বড় চালান এসব এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে। চাকুরিতে যোগদানের পর এস আই সোহাগ এলাকায় অভিযান চালানো শুরু করে। ডাসমারী ও মিজানের মোড়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক প্রকার আতঙ্ক এসআই সোহাগ। চলে একের পর এক মাদক বিরোধী অভিযান আটক হয় বড়বড় মাদকের চালান।
এর এক মাস পরে এসআই সোহাগের ভালোর মুখোশ খুলে যাই মাদক ব্যবসায়ীদের সামনে। শুরু হয় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি মাসে মাসোয়ারা নেওয়া এবং আটক বাণিজ্য।
জানা যায় মাদক বিরোধী এইসব অভিযানে যে পরিমাণ মাদক জব্দ হত তার সামান্য কিছু সরকারী খাতায় জব্দ তালিকায় দিয়ে বাকী মাদক রাজশাহীতে তাঁর পরিচিত মাদক ব্যবসায়ী ও বন্ধুদেরকে কম দামে বিক্রি করার জন্য দিয়ে দিতো।
আরো জানা যায়, মির্জাপুর ফাঁড়ির এক কর্মকতা বলেন, স্যারের কিছু বন্ধু ফাঁড়িতে আসতো আড্ডা দিতে এমন কি ফাঁড়িতে সোহাগ স্যার সহ তাঁর বন্ধুরা একসাথে প্রতিদিন ইয়াবা সেবন করতো। স্যার এর পরিবারের কয়জন আমাদের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছে যাঁরা অন্য জেলায় কর্মরত। সাথে রাজশাহীর স্থানীয় কিছু আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে মাদক সেবন করাই তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেননা। তাঁর দুর্নীতির কিছু নথি গণমাধ্যমের হাতে আসলে তা নিউজ প্রকাশ হওয়ার পর তাকে দায়িত্ব থেকে সড়িয়ে পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়।
পুলিশ লাইনে থাকার পরও থেমে ছিলো না তাঁর দূর্নীতি সিভিল ড্রেসে মতিহার থানার আওতায় যেসকল জুয়ার বোর্ড চলতো তাদের থেকে নিতেন মাসোয়ারা। আর রাজশাহীর বেলদারপাড়া, সাগরপাড়া নয়ত মাছুয়া পাড়ায় নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতে যেতেন এসআই সোহাগ। কখনো কখনো বিভিন্ন হোটেলে রুম নিয়ে সারারাত মদক সেবনের উৎসব আর আড্ডায় মগ্ন থাকতেন এসআই সোহাগ। এরপর তাঁর পরিবারের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সুপারিশে রাজশাহীর পবা থানায় যোগদান করেন এসআই সোহাগ।
পবা থানায় আসার পরও থেমে ছিলো না দূর্নীতি আর আটক বাণিজ্য। পুকুর খননকারী আর মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া হতো মাসোয়ারা।
সম্প্রতি দেশে ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় এসআই সোহাগ এর ডিউটি দেওয়া হয় রাস্তায়। যেসকল ছাত্ররা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে থাকতো তাদের চিহ্নিত করে রাতে পবা থানায় আটক করে নির্যাতন ও তার পরিবারকে হয়রানী করতেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিরীহ ছাত্র ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের সরাসরি গুলিও চালিয়েছিলেন পবা থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী এবং এস আই সোহাগ সহ আরো দুই পুলিশ কর্মকর্তা। স্বৈরাচার সরকারের ক্যাডার বাহিনী যুবলীগ , স্বেচ্ছসেবকলীগ ও ছাত্রলীগ তদের সাথেই ছিলেন এসআই সোহাগ। পুলিশের সামনে রাজনৈতিক নেতারা দেশি অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলনে হামলায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছাত্রদের উপর টিয়ারসের রাবার বুলেট চালিয়েছেন এই অসাধু পুলিশের এসআই সোহাগ। বিএনপি-জামাতসহ হাজার হাজার মানুষকে নির্যাতন করেছেন ছোট মামলা বড় মামলা নামে নেয়া হয়েছে হাজার হাজার টাকা। এরা সহ আরো অনেক পুলিশ কর্মকর্তা কোটি কোটি টাকা মাদক পাচারের সাথে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে পবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, এসআই সোহাগের বিরুদ্ধে এসকল অভিযোগ আমার জানা নাই তবে সে দোষী হলে অবস্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এখনও তিনি পবা থানায় বহাল আছেন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসআই সোহাগকে পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়েছে অথচ বদলির কোন পেপার্স তিনি দেখাতে পারেননি।
এ বিষয়ে আরএমপি’র মুখ্যপাত্র জামিরুল ইসলাম জানান,পবা থানার এসআই সোহাগের বদলির বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।