নিজস্ব প্রতিনিধি: গোদাগাড়ী উপজেলার ১ নং ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে প্লট ব্যবসায়ীর বাসায় রাতভর অভিযান পরিচালনা করেন রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। মাসিক মাসোহারা নিতে নাহিদ নামে এক দালালের কথা অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বাসা তল্লাশি নামে রাতভর হয়রানি ও নির্যাতন চালানো হয়। শিশু বাচ্চা, নারী, বয়স্ক প্রতিবেশিসহ অনেকই এ নির্যাতনে শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অপরাধ দমনে সরকার যখন নিরপেক্ষ তখনই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মরিয়া প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। আওয়ামী সরকারের আমলে প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতায় ফেঁসেছেন অনেক নিরপরাধ মানুষ। প্রশাসন সেই একই পন্থা অবলম্বন করে যাচ্ছেন নিরপেক্ষ সরকারের আমলেও। এমনই এক ঘটনার স্বাক্ষী হলো গোদাগাড়ীবাসী।
২৪ জুলাই ( বৃহস্পতিবার ) রাত আনুমানিক ১২ টা। গোদাগাড়ী ১ নং ইউনিয়নের পরমানন্দপুর এলাকায় প্লট ব্যবসায়ী পিয়ারুলের বাড়িতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ( ডিএনসি) রাজশাহী জেলা শাখা অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় বাড়িতে থাকা শিশু ও মহিলাদের অবরুদ্ধ করে ফেলেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে তাদের হাতে থাকা মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর শুরু করেন মারধর। প্রথমে পিয়ারুলের স্ত্রী গোলাপি বেগমকে (৩৫) একটি ঘরে ঢুকিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেন। তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন আর বলেন, তোর স্বামী কোথায় বল?
এসময় গোলাপি বলেন, আমার স্বামী আমাদের জমি চাষাবাদ করতে চর এলাকায় গেছেন। তারপরও তাকে একেরপর এক আঘাত করতে থাকেন। এরপর পিয়ারুলের মেয়ে রুপালি খাতুন (১৩) কে ঘরে নিয়ে যান তারা। রুপালিকেও মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে শিশু রুপালি কান্নায় ভেঙে পড়ে। তারপরও তাকে মারতে থাকেন তারা। সেভেন পড়ুয়া রুপালী এক পর্যায়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে অসুস্থ হন।
পাশেই খুপড়ি ঘরে শুয়ে ছিলেন প্রতিবেশি পাতান নামের এক বৃদ্ধ। তাকে জোরজবরদস্তি ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পিয়ারুলের বাড়িতে। এসময় পিয়ারুলের তথ্য দিতে না পারায় তাকেও চড় থাপ্পড় মারেন। প্রতিবাদ করলে তাকে আরও মারধর করেন।
ঐ এলাকার যুবক মোজাহার চেচামেচি দেখে এগিয়ে আসেন। তার কাছে চাওয়া হয় পিয়ারুলের ফোন নাম্বার কিন্তু মোজাহারের কাছে নাম্বার না থাকায় দিতে পারেননি। এরপর তাকেও মারেন চড় থাপ্পড়। এভাবেই গণহারে মারছিলেন সবাইকে। কেউ এগিয়ে আসতে পারেনি তাঁদের নিকট।
বাড়িতে অভিযানের সময় এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তি অথবা গ্রাম পুলিশকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করার নিয়ম থাকলেও ডিএনসি তার তোয়াক্কাও করেননি। বরং এলাকার কেউ এগিয়ে গেলেই হয়েছেন মারধরের শিকার।
রাত ১২ টা থেকে সকাল ৬ টা পর্যন্ত বাড়ির বিছানা, বালিশ, বিভিন্ন আসবাবপত্র তছনছ করে খুঁজেও মেলেনি কোন মাদক। পরে তারা বলেন আমরা বুঝতে পারিনি। আমাদের ভুল হয়েছে। কিছু মনে করো না। আমাদের চা খাওয়াও। ভয়ে পিয়ারুলের মেয়ে রুপালি খাতুন তাদের চা রেডি করে দেন। এরপর বিরিয়ানি খাওয়াতে বলেন। কিন্তু তাদের ঘরে বিরিয়ানির কোন ব্যবস্থা না থাকায় তা দিতে পারেন নি। এভাবে ছয় ঘন্টায় দুবার চা, বিস্কুট ও মুড়ি তৈরি করে দিতে বাধ্য করেন বলে জানান গোলাপি বেগম।
গোলাপি বেগম বলেন, আমার স্বামী যদি কোন অপরাধের সাথে জড়িত থাকেন, তাহলে বিচার বিভাগ আছে তার শাস্তির ব্যবস্থা দাবি করছি। কিন্তু আমরা কোন অপরাধ না করেও রাতের অন্ধকারে যা খুশি তাই করতে পারে না প্রশাসন। বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ ছিল না। তারা এলাকার কোন মানুষকে সাথে নিয়েও আসেনি।তারা ডাকাতের মত আচরণ করে গেছেন। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত করে ডিএনসির এই অবৈধ আভিযানিক টিমের শাস্তি চাই।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা আরও বলেন, কেল্লাবারুইপাড়া এলাকার এলতাস মেম্বারের ছেলে দালাল নাহিদ নেতা প্রশাসনের সাথে যোগসাজশ করে পরিবারটিকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করেছে। নাহিদ আমার স্বামীর নাম্বার না পেয়ে আমার বাড়িতে অভিযান করিয়েছে। এরা প্রশাসনের সাথে হাত মিলিয়ে সাধারন মানুষকে হয়রানি করে। চাঁদাবাজির এক নতুন ফন্দি নিয়ে কাজ করছে এই চক্রটি। এদের শাস্তি হওয়া উচিত। অভিযান পরিচালনাকারীরা ওই সময় তাঁদের পরিচয় গোপন রাখেন। তবে অভিযানে ডিএনসি’র বিপ্পব, রিপন, হাফিজা খাতুন নামে কয়েকজন ছিলো বলে স্থানীয়রা কয়েকজন জানান।
অভিযান পরিচালনাকারী পরিদর্শক রায়হান বলেন, নির্যাতনের বিষয়টি সঠিক নয়। তথ্য প্রযুক্তির ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযোগ অস্বীকার করেন নাহিদ। তিনি বলেন স্থানীয়রা কে কি বললো সেটা আমি জানি না। এর সাথে আমি কোনোভাবেই জড়িত না।
জানতে চাইলে রাজশাহীর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। জেনে পরে বিষয়টি আপনাকে জানাবো। অভিযান পরিচালনা করতেই পারে তাঁরা। তবে কাউকে বিনাদোষে মারধর করার এখতিয়ার রাখে না তারা। যদি এমনটি করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।