November 23, 2025, 12:51 am

রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে ৩০ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে ৩০ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

 

রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে টর্চার সেল গড়ে তুলেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। যেখানে সংবাদকর্মীসহ ৩০ জন সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের ‘ই’ এবং ‘বি’ ব্লকে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

 

নির্যাতনের শিকার গণমাধ্যমকর্মীরা হলেন—কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব ও শরীফুল ইসলাম। তারা রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) সদস্য। হামলায় অভিযুক্তরা হলেন—শাহরুখ, রাফি, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান, আহসান। তারা সবাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তের অনুসারী।

জানা গেছে, কলেজ ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক দলীয় কর্মসূচিতে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ। যেতে না চাইলে মারধরসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। নির্যাতন করা হয় টর্চার সেলে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা অসুস্থ থাকলেও ছাড় পান না শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও রয়েছে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ।

মারধরের শিকার নাজমুস সাকিব বলেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন সময় তাদের দলীয় প্রোগ্রামে জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায়। গতকালও বিকালে ছাত্রলীগের একটা কর্মসূচিতে যেতে হয়। সেখান থেকে ছাত্রলীগ নেতা রাফিকে (কর্মসূচি আহ্বায়ক) মেডিক্যালে যাওয়ার কথা বললে হোস্টেল ছেড়ে দিতে বলেন। তাকে মানিয়ে তিনি মেডিক্যাল যান। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬টায় হোস্টেলে ফিরলে ছাত্রলীগের শাহরুখ, রাজু, রাফি, হাসানসহ ৮ থেকে ১০ জন মিলে তার রুমে ঢুকে মারধর করতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, তার মোবাইল ফোনসহ বেশকিছু দামি জিনিসপত্র তারা কেড়ে নিয়েছে। এক পর্যায়ে সব শিক্ষার্থীকে ব্লকে আটকে রেখে তারা অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। এ সময় অনেককে মারধরও করা হয়। পরে সবাইকে ধাক্কা দিতে দিতে গণরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কারো কাছে কিছু না বলার জন্য শাসানো হয়। অন্যথায় তারা আরো ভয়ানক কিছু করবে। এক কথায় হোস্টেলে তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।

আরেক ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় বের হয়ে ব্যক্তিগত কাজে সারা দিন ব্যস্ত ছিলেন তিনি। সন্ধ্যায় রুমে ঢুকে প্রতিবেদন লিখছিলেন। এমন সময় হঠাৎ শাহরুখ রুমে ঢুকে পড়ে। কিছু না জিজ্ঞাসা করেই অতর্কিত মারতে থাকে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়েও রেহাই মেলেনি। আরো কয়েক জন তাকে মেরে রুম থেকে বের করে দেয়। তারা গালিগালাজ ও জোর করে তাকে অন্য ব্লকে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই ৪০ জন শিক্ষার্থীকে আটকে রেখেছে তারা। সেখান থেকে পরে সবাইকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয় কর্মসূচিতে। নাম প্রকাশ না করে এক জন বলেন, ‘ঘটনার পরে আমাদের শাসিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি রাশিক দত্ত। তিনি বলেন, যাই করো ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে নিয়মিত উপস্থিত থাকা লাগবে। না হলে হোস্টেল থেকে বের করে দেব।’ ঐ ছাত্রের অভিযোগ, এর আগেও অনেক বার গালিগালাজ ও বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত দায় স্বীকার করেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে সমঝোতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ঘটনার কথা শুনে তিনি বিব্রত। কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, ‘এর আগেও রাশিক দত্তের নেতৃত্বে এসে একবার এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সেটা মোটামুটি এক ধরনের দফারফা হয়েছিল। আর সে এ রকম ঘটনা করবে বলে না বলে আমাদের কাছে জানিয়েছিল। আবার হঠাৎ করে কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে? তা শুনে আমরা বিব্রত। এ রকম ঘটনা যাতে আর না ঘটাতে পারে সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা ভাবছি। দেখি তারা কী ব্যবস্থা নেন। ’ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে হামলা চালায় রাশিক দত্তের অনুসারী ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা। পরে দেড় বছর নেতৃত্বহীন থাকার পর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন রাশিক দত্ত ও আশরাফুল ইসলাম জাফর। পদে আসার আগে থেকেই নানা অপকর্মে সমালোচিত হোন রাশিক দত্ত।সুত্র ইত্তেফাক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.