রাজশাহী মহানগরীতে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে বাড়ির ছাদের টর্চারসেলে আটক রেখে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ৪ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে আরএমপি মহানগর ডিবি পুলিশ। এসময় তাদের বাড়ির ছাদের টর্চারসেল হতে বিপুল পরিমাণে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার হেতেমখাঁর মো: জোয়াদুল আহাদ খাঁন ফারুকের ছেলে মো: আরেফিন আহাদ খাঁন সানি (৪২), মৃত আজাদ আলীর ছেলে মো: মোস্তাক আহম্মেদ ফাহিম (২২), মো: নুরুজ্জামানের ছেলে মো: পারভেজ (২৭) ও চন্দ্রিমা থানার মেহেরচন্ডি কড়াইতলার মো: আলম সরকারের ছেলে মো: সাব্বির সরকার (২৫)। সাব্বির হেতেমখাঁ এলাকার বাসিন্দা।
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় আরএমপি (ডিবি) অফিসে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো: আল মামুন এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানার বাহাদুরপুরের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মো: দেলোয়ার হেসেন মন্ডল হরেক মালের ব্যবসা ও ফেরি করে চুল ক্রয় করেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০০ ঘটিকায় এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে চুল বিক্রয়ের কথা বলে লোকনাথ স্কুলের সামনে আসতে বলেন। দেলোয়ার তার ছোট ভাই আলাউদ্দিনের অটোরিক্সায় সন্ধ্যা ৭:৩০ ঘটিকায় লোকনাথ স্কুলের সামনে যান। সেখানে আসামি সানি ও ফাহিম মোটরাইসাইকেল নিয়ে এসে তাদের আটক করে। এরপর ফাহিম অটোরিক্সায় উঠে দেলোয়ারের পেটে চাকু ধরে অপহরণ করে বোয়ালিয়া থানাধীন হেতেমখাঁ বড় মসজিদের উত্তর পার্শ্বে একটি দুইতলা বাসার নিচতলায় আটক করে রাখে। সেখানে আসামিরা তাদের মারপিট করে এবং দেলোয়ারের পকেট থেকে ৩ হাজার ১৩০ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
কিছুক্ষণ পরে দেলোয়ারকে ঐ বাড়ির ছাদের উপর একটি ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব হতে অবস্থান নেওয়া অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন ব্যক্তি তার হাত বেঁধে ফেলে এবং তারা ঘরের দেওয়ালে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দেলোয়ার ও তার ছোট ভাইকে বাড়ি থেকে দুই লক্ষ টাকা বা জমির দলিল নিয়ে আসতে বলে। ভিকটিম টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা তাকে ব্যাপক মারধর করে।
এ অবস্থা দেখে তার ছোট ভাই আলাউদ্দিন বাড়িতে বিষয়টি জানায়। পরবর্তীতে রাত ১১:৩০ ঘটিকায় দেলোয়ারের বাড়ি থেকে তার জামাই আলামিন দুইজনকে সাথে নিয়ে এসে অপহরণকারীদের সাথে কথা বলেন। পরের দিন দুপুর ১২:৩০ ঘটিকায় অপহরণকারীরা ৫০,০০০/- টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে দেলোয়ার মহানগর ডিবি পুলিশের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন।
উক্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বিজয় বসাক, বিপিএম, পিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো: আল মামুন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো: আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, পুলিশ পরিদর্শক মো: আশিক ইকবাল, এসআই সুমন কুমার সাহা, ডিবি পুলিশের একটি বিশেষ টিম, আরএমপি সিআরটি ও বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে নিয়ে আসামিদের অবস্থান সনাক্ত করে গ্রেফতারের অভিযান শুরু করেন।
পরবর্তীতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের ঐ টিম গতকাল ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৪ ঘটিকায় নগরীর বোয়ালিয়া থানার হেতেমখাঁ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মো: আরেফিন আহাদ খাঁন সানিকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। এসময় তার বাড়ির ছাদের টর্চারসেল হতে বিপুল পরিমাণে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামি সানির দেওয়া তথ্যমতে, একই দিন সকাল ৭:৩০ ঘটিকায় আসামি ফাহিমকে এবং সকাল ৮:৩০ ঘটিকায় রাজপাড়া থানার লক্ষীপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপর আসামি মো: পারভেজ ও সাব্বিরকে গ্রেফতার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানায়, তারা সহজ সরল মানুষকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অপহরণ করে আসামি সানির বাড়ীর ছাদের উপর নির্মিত টর্চারসেলে আটক রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে। আসামিরা আরও জানায়, তারা সংঘবদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন যাবত এ কাজ করে আসছে।
পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া মডেল থানায় অপহরণ ও অস্ত্র আইনে দুইটি পৃথক মামলা রুজু করা হয়েছে।