November 24, 2024, 12:40 pm

News Headline :
রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব বন্ধে কঠোর হুশিয়ারি যুবদল নেতা রবি’র পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু রাজশাহীতে কোথাও স্থাপনা করতে না পেরে শেষমেস ভাঙারির দোকানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ: নাছিম রাজশাহীতে আলু ও তেলের দাম বাড়তি রাজশাহীতে ‘সমন্বয়ক’ সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বললো মহানগর ছাত্রদল প্রধান উপদেষ্টার সাথে খালেদা জিয়ার মতবিনিময় দেশের সকল ক্ষমতার মালিক হবেন জনগণ: ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজশাহীতে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন দালালের ফাইলে আগে সই করেন রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের ডিডি
রাজশাহীতে ভোটের মাঠে লিটন সরব, বাকিরা নামবেন জেনে-বুঝে

রাজশাহীতে ভোটের মাঠে লিটন সরব, বাকিরা নামবেন জেনে-বুঝে

নাহিদ ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সামনে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন। তবে এ সিটিতে সে আমেজ এখনও জোরেশোরে শুরু হয়নি। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে সামনের দিনগুলোয় প্রার্থীরা বড় আয়োজন নিয়েই ভোটের প্রচারণায় নামবেন।

এ বছর রমজান মাসে পাঁচ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। এরপর প্রতিটি সিটিতেই নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রাজশাহীতে দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।এবার তিনি জয় পেলে টানা চারবারের মেয়র নির্বাচিত হবেন তিনি।

মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই ফুরফুরে মেজাজে পুরোদমে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের এ হেভিওয়েট প্রার্থী। তিনি সরব থাকলেও এ সিটির অন্যান্য প্রার্থীরা এখনও মাঠে নামেননি। জানা গেছে তারা দ্রুতই মনোনয়ন সংগ্রহ করে ভোটের প্রচারণায় নামবেন, তবে সব দিকে বিবেচনা করে দেখে-শুনে-বুঝে।স্থানীয়রা বলছেন, তফসির ঘোষণার পর থেকেই মেয়র লিটন নিজের মতো করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। রাসিক নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় তিনি অনেকটাই নির্ভার। তবে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হবে ধারণা করে আগে থেকেই জনমত নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন তিনি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বসছেন। মতবিনিময় করছেন; সমস্যা শুনছেন, সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন। তুলে ধরছেন নিজের সময়কালের উন্নয়নের ফিরিস্তি। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আরও উন্নয়ন এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের।লিটন ছাড়া ভোটের মাঠে আপাতত অন্য কোনো প্রার্থী নেই। যারা প্রার্থিতা করবেন তাদের ছোটখাটো কোনো উদ্যোগ, কর্মসূচি বা নূন্যতম কোনো গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়নি রাজশাহীতে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ দুদিন কোনো প্রার্থী রাসিক নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ পর্যন্ত করেননি। শোনা যাচ্ছে- ভেতরে ভেতরে প্রার্থী ঠিক করে রাখলেও বর্তমানে সিটি নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন সবাই। একটু বুঝে শুনেই তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে চান। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশাই করছেন অন্যরা।গত ৩ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ লক্ষ্যে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো। এর মধ্যে সংসদে থাকা বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদসহ বিভিন্ন দল এ নির্বাচনে প্রার্থী দেবে বলে শোনা গেছে।

নির্বাচন সামনে রেখে অন্যরা যেখানে করণীয় নির্ধারণ করছে সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত প্রার্থীর সমর্থনে নানান কৌশলে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনী কমিটি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ সব সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে।এরই মধ্যে ঈদুল ফিতর আশীর্বাদ হয়ে ওঠে ভোটের রাজনীতিতে। ঈদ শেষ হয়েছে এক সপ্তাহ। কিন্তু আমেজ চলছে এখনও। এই প্রথম ঈদে রাজশাহীর ভোটারদের মোবাইলে এসএমএস দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানান খায়রুজ্জামান লিটন। তার এ ঈদ শুভেচ্ছা রাজশাহীর ভোটের রাজনীতিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এখনও বিভিন্ন ব্যানারে ঈদ পুনর্মিলনী ও ঈদ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন রাসিক মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। এছাড়া প্রতিদিনই ওয়ার্ড ভিত্তিক নেতাকর্মীদের নিয়ে নিয়মিত মতবিনিময় করছেন তিনি।আর নির্বাচনে না যাওয়ার গো ধরে থাকা বিএনপির বর্তমান অবস্থান অনেকটা ভোট পর্যবেক্ষকদের মতোই। পরিস্থিতি এমন যে তারা আগেই থেকেই ভোটের ফলাফল জানেন। আর এজন্যই কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না। তাই রাজশাহী সিটি নির্বাচন নিয়ে দলটির কোনো মাথা ব্যথা নেই। তবে ভোটে না যাওয়ার বিষয়টি পোড়াচ্ছে বিএনপির তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মন।এক সময়ের বিএনপির দূর্গ খ্যাত রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য ভাঙতে চান তারাও। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে ভেতর ভেতর ইচ্ছে থাকলেও কেউই বাইরে মেয়র প্রার্থী হতে চান না। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থীর আড়ালে নগরে এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন দলটির কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপরীতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে চান। এই ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয়ের চেয়েও ব্যক্তি পরিচয়ে এলাকায় জনপ্রিয় প্রার্থীরা প্রাধান্য পাবেন বলেই তাদের দৃঢ় বিশ্বাস। এজন্য রাজশাহীতে মেয়র পদটি আপাতত নির্ভার থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের লড়াই জমে উঠতে যাচ্ছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আর এতে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ওয়ার্ডে সহিংস ঘটনারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা ভোটের মাঠে থাকার পক্ষেই রায় দিয়েছেন। তারা চান আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপিও ভোটের লড়াইয়ে আসুক। তাদের বিশ্বাস মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পরিবর্তন আনতে পারলে সংসদ নির্বাচনে গিয়েও তার প্রভাব পড়বে।তবে সিটি নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, দল খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, এ সরকারের আমলে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। কাজেই সিটি নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। নির্বাচন কী হবে তারা তা জানেন। নির্বাচন প্রশ্নে তাদের একটাই দাবি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ দাবিতেই তারা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবেশ সৃষ্টি হলে নির্বাচনমুখী দল বিএনপি নির্বাচনে যাবে; না হলে নয়। আর দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।এদিকে ১৪ দলের অন্যতম প্রধান শরিক দল জাতীয় পার্টির রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন জানান, দলীয় হাইকমান্ড থেকে তাকেই মেয়র হিসেবে প্রার্থী হতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। শেষ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ থাকবে কী না, ভোট সুষ্ঠুভাবে হবে কী না সেই বিষয়টি নিয়ে তিনি এখনও যথেষ্ট সন্দিহান। কারণ মানুষ ভোট দিতে না পারলে শুধু শুধু টাকা খরচ করে কী লাভ? তাই অপেক্ষা করছেন। ভোটের পরিবেশ দেখে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও উল্লেখ করেন এই জাপা নেতা।জোটের অপর শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। সিটি নির্বাচন প্রশ্নে এখন পর্যন্ত তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি। দেয়নি কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্যও। তবে দলটির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী সদর আসন-২ থেকে আগামী নির্বাচনেও চতুর্থবারের মতো প্রার্থী হতে চান। তাই সিটি নির্বাচনে তারা কোনো প্রার্থী দিচ্ছেন বলেই জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।তবে গত ১৯ এপ্রিল দলীয় মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এবার দলের প্রার্থী পরিবর্তন করে রাজশাহী নগর শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি ‘হাতপাখা’ প্রতীক নিয়ে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী পেশায় কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক। এছাড়া তিনি একটি মসজিদের ইমামও। গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট হলেও তিনি বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার।মাওলানা মুরশীদ আলম ফারুকী বলেন, আগামী পয়লা মে তাদের শ্রমিক দিবসের কর্মসূচি রয়েছে। ওই কর্মসূচি থেকেই তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। ওই দিনের কর্মসূচি থেকেই তার দলের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। তিনি দলীয় সিদ্ধান্তে রাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। তবে তাদের কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী নেই। তাই তাদের সব মনোযোগ মেয়র পদকে ঘিরে এক জায়গাতেই থাকবে। আর গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বলছে- এবার নির্বাচন সুষ্ঠু হলে হাতপাখা বিজয়ী হবে।এছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট মুরাদ মোরশেদ এবার ভোট করছেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক জোট। সেই জোট থেকে এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই ২০১৮ সালের রাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হলেও এবার নির্বাচন করছেন না বলে জানান।ভোট প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমরা সব সময় জনগণ ও দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছি। এখনও করছি। রাজশাহী এখন সারা দেশের মধ্যে রোল মডেল। যারাই রাজশাহী আসছেন তারাই প্রশংসা করছেন। এটি একদিনে হয়নি। গেল পাঁচ বছর জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা শুনেছি। কাজ করেছি। বর্তমানে সরকারের উন্নয়নের সেই বার্তা আবারও সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আগামীতে নির্বাচিত হলে আমি রাজশাহীর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করব।রাসিক নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের আশার কথা উল্লেখ করে লিটন আরও বলেন, কাউকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এজন্য আমি তাদের (বিএনপি) আহ্বানও জানিয়েছি। কিন্তু তারা নির্বাচনে আসতে ভয় পায়। কারণ, আওয়ামী লীগ সব সময়ই মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে ছিল। কিন্তু তারা ছিল না, এখনও নেই। এজন্য তারা ভয় পায়। আমি এখনও চাই সবাই নির্বাচনে আসুক।

Please Share This Post in Your Social Media

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.