নাহিদ ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পাঁচ বছর পর রাজশাহীর সিটি করপোরেশনে (রাসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২১ জুন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সদ্যই প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলররা।আর প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার প্রথম দিন থেকেই জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন প্রার্থীরা।
সেই কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ।দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছে বাইকিং। প্রধান প্রধান সড়ক থেকে পাড়ার অলিগলিতেও চলছে মাইকিং।’… ভাইয়ের মার্কা কী… আর কি?’, ‘মা-বোনকে জানিয়ে যাই … মার্কায় ভোট চাই’, ‘চারিদিকে একি শুনি … ভাইয়ের জয়ধ্বনি’। ‘… মার্কা কি?… ছাড়া আর কি’? ‘২১ জুন সারাদিন … মার্কায় ভোট দিন’ ইত্যাদি স্লোগান আর নিনাদ ভেসে বেড়াচ্ছে রাজশাহী শহরে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ড যেন প্রকম্পিত হয়ে উঠছে দুপুরে পর।আর রোজ বিকেল হলেই পাড়া-মহাল্লায় শুরু হচ্ছে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রচার মিছিল। এলাকার শিশু-যুবা, তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়সী নর-নারী কেউই যেন এখন আর বেকার নেই। কিছু নগদ অর্থের জন্য প্রতিদিনই অংশ নিচ্ছেন এসব নির্বাচনী প্রচার মিছিলে; করছেন প্রচারপত্র বিলি। শিশু-কিশোরদের নির্বাচনী প্রচারণায় নামার ব্যাপারে কিছু বিধি-নিষেধ থাকলেও ওয়ার্ড পর্যায়ে তা একদমই মানা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে চারিদিকে যেন নির্বাচনী ডঙ্কা বেজে উঠেছে। সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের সরগম প্রচার-প্রচারণায় পুরো রাজশাহী শহরে তৈরি হয়েছে অন্য রকম এক নির্বাচনী আবহাওয়া। গরমের তীব্রতায় দুপুর বেলায় নির্বাচনী গণসংযোগ চালাতে না পারলেও সকাল ও বিকেলের দিক থেকে প্রার্থীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।রাজশাহীকে আরও আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন নিয়ে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুটছে মেয়র প্রার্থীদের মুখে। শনিবার (৩ জুন) মেডিকেল কলেজ অডিটরিয়ামে রাজশাহীর জন্য ছয় দফা ইশতেহারসহ মোট ১০টি খাতে ৯৯টি উন্নয়ন ও সেবামূলক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মেয়র প্রার্থী এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তার আগে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপনও নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টির অপর দুই প্রার্থী এখনও তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেননি।
মেয়র প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে এলাকার উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নিজ নিজ এলাকার সাধারণ ভোটারদের। মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের এমন প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে রাজশাহী।
তবে প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এরই মধ্যে শুক্রবার (২ জুন) নগরীর উপশহরে বর্তমান কাউন্সিলর আনারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে অপর কাউন্সিলর প্রার্থী টুটুলের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার, ফেস্টুন ও নির্বাচনী বিলবোর্ড লাগানো, ছিড়ে ফেলা এবং ভেঙে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। তবে এখন পর্যন্ত এসব ব্যাপারে কারও কোনো লিখিত অভিযোগ আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে জমা হয়নি।
প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই তার আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার তিনি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। তিনি আবারও সুযোগ পেলে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চান। এরই মধ্যে রাজশাহীর উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। এবার তিনি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ রাজশাহীকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও লাঙল প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, তার কাছে মনে হয়েছে এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। আর শেষ পর্যন্ত ভালো থাকলে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় অন্যান্য নির্বাচনী সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। প্রচার-প্রচারণা শেষে ভোটাররাও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন। আর নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে ফলাফল যাই হোক তা সবাই মেনে নেবেন। তবে ফলাফল যাই হোক তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন বলেও জানান স্বপন।
তবে ভোটের মাঠে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলেও কেউ কেউ বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী। হাতপাখার প্রার্থী মুরশিদ আলম বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে। তবে একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই বুঝতে পারবেন প্রচারণা শুরুর পর কে বা কারা বেশি সুযোগ পাচ্ছেন। অনেকে তো প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার সাঁটিয়ে দিয়েছেন। তারা বিষয়টা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে বলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলেই তারা আশাবাদী। কিন্তু ইভিএম নিয়ে যেমন আস্থা আছে, তেমন শঙ্কাও আছে।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, মাত্রই প্রচারণা শুরু হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের দিনই (২ জুন) প্রার্থীদের আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। আর প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলছেন কিনা তা দেখভাল করার জন্য ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা অন্যান্য দায়িত্বের সঙ্গে এবিষয়গুলোও মনিটরিং করছেন। তবে এখন পর্যন্ত কারো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ১৫২টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ১৭৩টি কক্ষে ওই দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রাসিক নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ জন। আর এবারই প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৩০ হাজার ১৫৭ ভোটার।