সবুজ হোসেন রাজা, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: চিনি উৎপাদনে লোকসানের মুখে পড়লেও মদ উৎপাদনে ক্রমাগত সাফল্যের দেখা পাচ্ছে দেশের একমাত্র লাইসেন্সধারী অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার প্রুফ লিটার মদ বিক্রি করে কোম্পানিটি আয় করেছে প্রায় ৪৩৯ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে কেরুর নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে যা প্রায় ১৩ কোটি টাকার বেশি। খবর : দা বিজনেস স্টান্ডার্ড’র।
এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগে রেকর্ড পরিমাণ ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার প্রুফ লিটার মদ উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৪২ হাজার প্রুফ লিটার বিলেতি মদ এবং ৩২ লাখ ৮০ হাজার প্রুফ লিটার বাংলা মদ রয়েছে। এছাড়া ডিনেচার স্পিরিট, রেক্টিফাইড স্পিরিটসহ অন্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
দেশের বাজারে মদ বিক্রি হয়েছে ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার প্রুফ লিটার। মদ বিক্রি করে আয় হয়েছে প্রায় ৪শ’ ৩৯ কোটি টাকা। সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১শ’ ৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ডিস্টিলারির লাভ হয়েছে ১শ’ ৫২ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগে মদ উৎপাদন হয় ৫৩ লাখ ৭৯ হাজার প্রুফ লিটার। বিক্রি হয় ৫৪ লাখ ৪৮ হাজার প্রুফ লিটার। যার বাজারমূল্য ৩শ’ ৬৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১শ’ ১৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ডিস্টিলারির লাভ হয় ১শ’ ৩২ কোটি টাকা।
১৮০৩ সালে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী জন ম্যাক্সওয়েল চোলাই মদের কারখানা (ডিস্টিলারি) হিসেবে ব্রিটিশ ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে কেরু অ্যান্ড কোং প্রতিষ্ঠা করেন। পর্যায়ক্রমে আসানসোল, কাটনি এবং চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কোম্পানিটির শাখা খোলা হয়।
১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় প্রতিষ্ঠা পাওয়া “কেরু অ্যান্ড কোং”কে ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়। এরপর থেকেই কোম্পানিটি কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড হিসেবে পরিচিতি পায়।
বর্তমানে কেরুর ছয়টি ইউনিট রয়েছে। চিনি, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাণিজ্যিক খামার, আকন্দবাড়িয়া খামার (পরীক্ষামূলক) এবং জৈব সার। এর মধ্যে শুধু ডিস্টিলারি ও জৈব সার ইউনিট থেকে লাভ করছে কোম্পানিটি।
কেরু অ্যান্ড কোং এর ডিস্টিলারি ইউনিট নয়টি ব্র্যান্ডের মদ তৈরি করে। যার মধ্যে রয়েছে ইয়েলো লেভেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাসাও, জারিনা ভদকা, রোজা রাম এবং ওল্ড রাম।
কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, ‘চিনিকলের লোকসান সমন্বয় করে গত অর্থবছরে ৮০ কোটি টাকা লাভ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আখ উৎপাদন ও মিলের উৎপাদন বাড়াতে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। কৃষকদের আখ চাষে আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আখের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। একমাত্র চিনিকল ছাড়া সব ইউনিট লাভজনক। বর্তমানে ডিস্টিলারি ও চিনিকল ইউনিট আধুনিকায়নের কাজ চলছে।’
২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি ১০০ কোটি টাকা মুনাফ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বলে মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন।