ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দুর্বল রাষ্ট্রব্যবস্থা, চলমান অর্থনৈতিক সংকট, আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতির কারণে দেশটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে। এসকল বিপর্যয়ের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে গভীর অমানিশা।
পকেটে টাকা না থাকায় প্রায় সবারই নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে দুমুঠো ভাত জোগাড় করতে অনেক নারীই পতিতাবৃত্তি পেশাকে বেছে নিচ্ছেন। কয়েক মাসের ব্যবধানে দেশটিতে পতিতাবৃত্তি বেড়েছে ৩০ শতাংশ, দাবি শ্রীলঙ্কায় যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ড-আপ মুভমেন্টের।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় দেখা গেছে, সংকটের পরপর দেশটির নারীরা তাদের চাকরি হারিয়েছেন। একদিকে চাকরির বাজারে সঙ্কট, অন্যদিকে আকাশছোয়া বাজারদর। এ অবস্থায় বেঁচে থাকার তাগিদে দেশটিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পতিতালয়। শুধু তাই নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বা ওষুধের কারণেও নারীরা স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য হচ্ছেন।
গবেষণা বলছে, যারা নতুন করে এই পেশায় জড়াচ্ছেন, তারা আগে বস্ত্রখাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। বেশিরভাগই কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েন। বাধ্য হয়ে তারা জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হিসেবে পতিতাবৃত্তি পেশার সাথে যুক্ত হচ্ছেন। অনেক জায়গায় স্পা এবং সুস্থ থাকার সেন্টার হিসেবে এসব পল্লী গড়ে উঠছে। পরিবারের মুখে তিন বেলা খাবার জোটাতে একটিই মাত্র উপায় আছে বলে জানিয়েছেন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়া নারীরা।
স্ট্যান্ড-আপ মুভমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আশিলা ডানদিনিয়া বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেক নারী শ্রমিককে বস্ত্রখাতের কাজ থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তারা যৌনকর্ম বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
এই পেশায় যুক্ত থেকে এসব নারীরা মাসে ১৫-২০ হাজার রুপি আয় করছেন, আগে যেখানে তারা চাকরি করে মাসে ২০-৩০ হাজার রুপি আয় করতেন। এই অর্থ উপার্জনের জন্য নারীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাজনিত অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলেও দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কার প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। সামনের দিনগুলোতে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে সংস্থাটি।