June 22, 2025, 5:10 am

News Headline :
বাগমারায় কৃষিজমিতে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন জমকালো আয়োজনে রাজশাহী শাহমখদুম থানা বিএনপির কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত রামেক হাসপাতালের শৌচাগারে পড়ে ছিলো করোনা রোগীর মৃতদেহ রাজশাহী প্রেসক্লাব অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবিতে জেলা প্রশাসকের বরাবর সাংবাদিকদের স্মারকলিপি প্রদান জোরকরে চেয়ারম্যানকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর, সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ওল্ড রাজশাহী ল্যাবরেটরিয়ান্স সোসাইটি’র বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বোয়ালিয়া মডেল থানার, এবার ঘুষ গ্রহণের অডিও ভাইরাল ঈদ শুভেচ্ছা জানালেন রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন সিরাজগঞ্জে ৬ বছরের শিশু’কে ধর্ষণের পর হত্যা
বদলে গেল রাজশাহী চিড়িয়াখানা, নেই কোন পশুপাখি

বদলে গেল রাজশাহী চিড়িয়াখানা, নেই কোন পশুপাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: উন্নয়ন-সংস্কারের পর গত বুধবার দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। কিন্তু চিড়িয়াখানায় আগের সেই পশুপাখি নেই। পশুপাখিগুলোর কিছু মারা গেছে, কিছু বিক্রি করা হয়েছে। আবার কিছু অনুদান হিসেবে বিভিন্নজনকে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে পশুপাখি না আনার ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। চিড়িয়াখানার ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও রিসোর্ট।

এ ঘটনায় নগরবাসীর মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ফেসবুকে একজন লিখেছেন, ‘কাঁদো শিশুরা কাঁদো। রাজশাহী চিড়িয়াখানার কফিনে শেষ পেরেক।’

তবে মেয়র খায়রুজ্জামান বলেছেন, এত অল্প জায়গায় আসলে চিড়িয়াখানা হতে পারে না। এখানে নতুন করে পশুপাখি আনা হবে না। ভবিষ্যতে রাজশাহীতে একটি সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন উন্নয়নকাজ হচ্ছে। এখানে ওয়াচ টাওয়ার, অ্যাকুয়ারিয়াম, এমম্ফি থিয়েটার নির্মাণ করা হবে। শিশুদের বিনোদনের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরনের রাইড। পর্যায়ক্রমে এসব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

নগরবাসীর বিনোদনের চাহিদা মেটাতে ব্রিটিশ আমলের তৎকালীন ঘোড়দৌড়ের মাঠে উদ্যান ও চিড়িয়াখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও জেলা প্রশাসক আবদুর রউফ। ১৯৭২ সালে কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ৩৩ একর জমিতে নির্মিত উদ্যানটি ১৯৯৬ সালে জেলা পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, চিড়িয়াখানায় এক সময় বাঘ, সিংহসহ অনেক পশুপাখি ছিল। ১৯৯৭ সালের জুনে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে ৬ বছর ৪ মাস বয়সের একটি বাঘ আনা হয়। নাম দেওয়া হয় সম্রাট। বাঘটির সঙ্গী ছিল না। ১২ বছর নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়ে ২০০৮ সালে বাঘটি মারা যায়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত সম্রাট পুরোনো খাঁচায় বাস করে। পরে বাঘের জন্য নতুন একটি খাঁচা বানানো হয়, কিন্তু আর বাঘ আনা হয়নি। এবার নতুন খাঁচাটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। আগে চিড়িয়াখানায় একটি সিংহ ও একটি সিংহী ছিল। ২০১৩ সালে হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সিংহী মারা গেলে কয়েক মাস পর সিংহটিও মারা যায়। এরপর থেকে এদের খাঁচাও পড়েছিল। খালি খাঁচায় পেলিক্যান পাখিটি রাখা হয়েছিল। এখন সেই খাঁচাও নেই।

সূত্র জানায়, চিড়িয়াখানায় একসময় উট, হায়েনা ছিল। ভালুকের জন্য ছিল একসঙ্গে যুক্ত দুটি নতুন খাঁচা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অসুস্থ হয়ে ভালুকটি মারা যায়। বানর, গাধা ও হরিণের জন্য নতুন খাঁচা তৈরি করা হয়েছিল। এখন শুধু হরিণের খাঁচায় বেশ কয়েকটি হরিণ আছে। পশুপাখিদের মধ্যে স্বপ্নপুরী পার্কে অনুদান হিসেবে দুটি বেবুন, ১৩টি বানর, তিনটি হনুমান, একটি অজগর ও দুটি মদনটাক পাখি দেওয়া হয়েছে। একটি মায়া হরিণ স্বপ্নপুরী পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

চিড়িয়াখানার নথি থেকে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর কাঁকনহাটের জনৈক ফজলুল হককে ১৮টি বানর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি অনুদান হিসেবে পেয়েছেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে বাকিগুলোর দাম নেওয়া হয়েছে কি না, নথিতে উল্লেখ নেই। চিড়িয়াখানায় একটি ময়ূর ছিল। বাচ্চা হওয়ার পর মা ময়ূরটি মারা যায়। বাচ্চাটি বড় হয়েছিল। সেটি ফজলুল হকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। দুটি গাধা তাঁর কাছেই বিক্রি করা হয়েছে। অনুদান হিসেবে পেয়েছেন পেলিক্যান পাখিটি। জনৈক সিদ্দিকী তাঞ্জিলুর রহমানের কাছে তিনটি গাধা, মারুফ কবিরের কাছে ১৮টি রাজহাঁস, খাজা আলমের কাছে ২০টি বাজিকর ও লাভবার্ড পাখি বিক্রি করা হয়েছে। চিড়িয়াখানার একমাত্র ময়না পাখিটি অনুদান হিসেবে পেয়েছেন জনৈক অজু নামের ব্যক্তি। দুটি ইগলের একটি অনুদানে পেয়েছেন জনৈক নোবেল আর একটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জনৈক শামসুল, নোবেল, ইসমাইল, জয়া ও কৃষ্ণ নামের চার ব্যক্তি অনুদান হিসেবে ১৪টি খরগোশ পেয়েছেন। চারটি টিয়া পাখি, দুটি বনবিড়াল ও একটি গন্ধগোকুল প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ৯টি কচ্ছপ লেকে অবমুক্ত করা হয়।

চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নে ২০১০ সালে একটি প্রকল্প নেয় সিটি করপোরেশন। ওই সময় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে চিড়িয়াখানার ভেতরে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে চিড়িয়াখানার চৌহদ্দির ভেতরে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘অরণ্য রিসোর্ট’ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সাতটি পরিবার থাকতে পারবে। ২২২ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের নির্মাণ চলছে। এ ছাড়া পার্কের ভেতরে প্রায় ১৬ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ হয়েছে।

এর আগে মেয়র খায়রুজামান বলেছিলেন, চিড়িয়াখানাটি এখন উদ্যান হয়ে যাবে। এখানে বিরল প্রজাতির গাছ লাগানো হবে। শিশুরা গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। তাদের জন্য রাইডের ব্যবস্থা করা হবে। শিশুরা সময় কাটানোর জায়গা পাবে। তবে ঘড়িয়াল ও হরিণগুলো থাকবে।

বুধবার খুলে দেওয়ার পর আজ শুক্রবার দুপুরে নওগাঁ থেকে পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছিলেন আবদুল হাকিম। তিনি বললেন, ‘আগে এসে যে মজা পেয়েছিলাম, এখন আর সেটি নেই, যা দেখছি সব আর্টিফিশিয়াল। সঙ্গে বাচ্চারা এসেছে। ওরা বাঘ, ভালুক, বানরসহ বিভিন্ন পশুপাখি দেখতে চায়। কিন্তু সেসব নেই।’

চিড়িয়াখানায় শেষ পেরেক ঠোকা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন।

আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, শিশুদের মানসিক বিকাশে বইয়ে বিভিন্ন পশুপাখির ছবি দেওয়া হয়। শিশুরা চিড়িয়াখানায় গিয়ে বাস্তবে সেই পশুপাখি দেখে বেশি আনন্দ পায়। মানসিক বিকাশের জন্য এটা খুবই জরুরি। কিন্তু এখন যা করা হলো, তা কংক্রিটে আকীর্ণ। চিড়িয়াখানার ধারণার সঙ্গে একেবারেই যায় না। গত তিন বছরে নীরবে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করা হলো। পৃথিবীর আর কোথাও এমন নজির আছে কি না, জানা নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

ads

ads



© All rights reserved © 2024
Developed by- .:: SHUMANBD ::.